‘পুলিশকাকু আপনাদের ছেলেমেয়েরা কি পড়াশোনা করে না?’ চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের উপর লাঠি ও লাথিচার্জের প্রতিবাদে এমনই প্রশ্ন তুললেন দ্বাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া। তাঁর কথা শুনে অবাক হয়ে যান উপস্থিত শিক্ষকরাও।
২০১৬ এসএসসি-এর পুরো প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক, শিক্ষিকা। প্রতিবাদে কসবার ডিআই অফিসে বিক্ষোভ দেখান চাকরিহারারা। অভিযোগ, বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠায় ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এমনকী এক চাকরিহারা শিক্ষককে পুলিশ লাথি মেরেছে—এই দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। এর প্রতিবাদে 'সভা'-র আয়োজন করে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি ব্লকের মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের পড়ুয়ারা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই স্কুলেরও ৩ শিক্ষক ও ২ শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। পড়ুয়ারা মর্মাহত। তার উপর এই ঘটনা।
মূলত দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাই প্রধান শিক্ষকের কাছে ঘটনার প্রতিবাদ করার প্রস্তাব রাখেন। প্রধান শিক্ষক প্রসূন কুমার পড়্যা না করতে পারেননি। বুকে কালো ব্যাজ পরে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা এই প্রতিবাদে যোগ দেন। সেখানেই একপ্রকার গর্জে ওঠে দ্বাদশ শ্রেণির 'ফার্স্ট বয়' সৌম্যদীপ সিংহ।
শিক্ষক ও পড়ুয়াদের সামনে সৌম্যদীপ বলেন, 'শিক্ষকরা সমাজ গড়ার কারিগর। চাকরি হারিয়ে তাঁরা কিছু প্রশ্ন নিয়ে ডিআই অফিসে গিয়েছিলেন। আর তাঁদের উপর এই নির্যাতন! পুলিশ কাকু আপনিও তো একদিন কোনও না কোনও শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেছেন। তাঁদের কথা কি একবারও মনে পড়ল না? আপনার ছেলেমেয়েরাও নিশ্চয়ই পড়াশোনা করছেন কোনও না কোনও শিক্ষকের কাছে! নাকি তাঁরা পড়াশোনা করে না?’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসূন কুমার পড়িয়া বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমাদের স্কুলের ৩ জন শিক্ষক ও ২ জন শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। রসায়ন, জীববিদ্যা ও ইতিহাসের ৩ শিক্ষকই ছাত্রছাত্রীদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। রায় ঘোষণার পরদিন থেকে তাঁরা আর স্কুলে আসছেন না। ছাত্রছাত্রীদের মন খারাপ। তার উপর বুধবারের ওই ঘটনা, ওরা কেউই মানতে পারেনি!’