নাকতলার ওপেন এয়ার সিনেমা উৎসবের এক ব্যতিক্রমী গল্প ...
আজকাল | ১২ এপ্রিল ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২০ সালের শীত। লকডাউন কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে বিশ্ব। ঠিক সেই সময়, দক্ষিণ কলকাতার উপকন্ঠে নাকতলায় একদল সিনেমাপ্রেমী তরুণ ঠিক করলেন—সিনেমা দেখানো হবে খোলা আকাশের নিচে, জনগণের মাঝে, রাস্তাতেই! সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় কলকাতা ওপেন এয়ার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, যার আয়োজনে রয়েছেন Blue Chalk Studio-র উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি সিনেমা নিবেদিতপ্রাণ দল।
“পূর্ব ভারতে এরকম কোনো ওপেন এয়ার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ছিল না,” জানিয়েছেন অন্যতম উদ্যোক্তা শমিক দাস (রুডি নামে পরিচিত)। “তখন ভাবলাম, কেন না এখান থেকেই শুরু করা যাক?”
প্রথমে ছিলেন মাত্র তিনজন বন্ধু। পরে সেই দলটা বাড়তে বাড়তে ছয় থেকে আট জনে দাঁড়ায়—পেশা আলাদা হলেও সবার হৃদয়ে একটাই টান: সিনেমা। মূল দলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ঋতম, অরিত্র, প্রলয়, অবনীশ, বিশ্বজিৎ, চিরশ্রী, পরমিতা, প্রিয়াঙ্কা এবং প্লাবন ভট্টাচার্য।
প্রথমবার পরিসর ছিল ছোট, কিন্তু গভীর ছাপ ফেলা এক আয়োজন—তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান, যেখানে ছিল ইনডোর ও আউটডোর দু'ধরণের প্রজেকশনের সুযোগ। দর্শকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো জায়গা বেছে নিতে পারতেন।
বৈচিত্র্যই এই উৎসবের প্রাণ। বাণিজ্যিক থেকে আর্ট ফিল্ম, দেশি থেকে বিদেশি—সব রকম ধারার ছবি দেখানো হয় এখানে। এবারের (২০২৫) উৎসব ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। উল্লেখযোগ্য ছবিগুলির মধ্যে থাকছে:
কঙ্কণা সেন শর্মার 'আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ'।
কারলা সিমনের 'আলকারাস'
মাতি ডিওপের 'ডাহোমে'
জোয়া আখতারের 'জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা'
জাস্টিন ত্রিয়ের 'অ্যানাটমি অফ আ ফল'
আলেসান্দ্রা লাকোরাজার 'ইন দ্য সামার্স'
এই উৎসবের সবচেয়ে বড় পরিচয় উদারতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।“প্রথম দিন থেকেই আমরা কোনো টিকিট রাখিনি,” জানালেন শমিক। “সবাই আসবে, সবাই দেখবে—এটাই ছিল লক্ষ্য।”
প্রচার, পৃষ্ঠপোষকতা বা কর্পোরেট স্পনসর ছাড়াই শুধুমাত্র মানুষের ভালবাসা আর কমিউনিটির জোরে টিকে আছে এই উৎসব। “একসময় আমরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি আবেদন করতাম—এই স্বপ্নটা বোঝানোর জন্য। তখন তিন দিনের জন্য ১০০ টাকার একটা কার্ড ছিল। অর্থ নয়, দরকার ছিল সমর্থনের।”
এখন পঞ্চম বছরে পা রেখেছে কলকাতা ওপেন এয়ার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। নাকতলার আকাশের নিচে প্রতিটি সন্ধ্যা হয়ে উঠছে চলচ্চিত্রের উৎসবে পরিণত—যেখানে সিনেমা আর শুধুই পর্দার শিল্প নয়, হয়ে উঠেছে মানুষের গল্প।
কলকাতার এমন প্রাণবন্ত আয়োজনে অন্তত একদিন ঢুঁ মেরে আসাই যায়।