• গলা সমান EMI, খেলনা বন্দুক নিয়ে ব্যাঙ্ক লুটের ছক
    এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • গলা পর্যন্ত ডুবে ছিলেন ঋণে। মাস মায়না দিয়ে কিছুতেই কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। ব্যাঙ্কের কিস্তি মেটাতে নাজেহাল হচ্ছিলেন। তাই ঋণের দায় থেকে বাঁচতে শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্ক লুটের ছক। সেই প্ল্যানও ভেস্তে যাওয়ায় শ্রীঘরেই যেতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ডালিম বসু ওরফে তাতাইকে। বয়স বছর পঁয়ত্রিশের আশপাশে। শুক্রবার ঘটনাটি দক্ষিণ কলকাতার সার্ভে পার্ক থানা এলাকার।

    পুলিশ জানিয়েছে, ডালিমের প্রায় একত্রিশ লক্ষ টাকা লোন রয়েছে ব্যাঙ্কের। তার ইএমআই শোধ দিতে না–পেরেই এই লুটের ছক বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। তবে খেলনা বন্দুক দিয়ে বাজিমাত করতে গিয়ে ব্যাঙ্কের এক কর্মীর তৎপরতায় তিনি পুলিশের জালে ধরা পড়ে যান। ডালিম যোগাযোগ ভবনে কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক বিভাগে ‘শর্টিং অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে কর্মরত।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সার্ভে পার্কে ডালিমের বাড়ি থেকে মাত্র একশো মিটার দূরত্বে একটি সরকারি ব্যাঙ্ক রয়েছে। সেখানেই লুটের ছক কষেছিলেন তিনি। শুক্রবার বেলা পৌনে ৩টে নাগাদ সন্তোষপুর অ্যাভিনিউয়ের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে হাজির হন ডালিম। পুলিশ সূত্রে খবর, একটি খেলনা বন্দুক (পরে জানা যায়, সেটা আসলে একটা গ্যাস লাইটার) ও একটি ফোল্ডিং ছুরি নিয়ে ব্যাঙ্কে ঢোকেন ডালিম। ঢুকেই ব্যাঙ্কের মেন গেট বন্ধ করে দেন। ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের ঘরে ঢুকে ওই খেলনা বন্দুক দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা বার করে দিতে বলেন তিনি। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সেই সময়ে ব্যাঙ্কের এক কর্মী বুঝে যান সেটি একটি খেলনা বন্দুক। এরপরেই ডালিমকে আটকানোর চেষ্টা করেন ওই কর্মী। তখন ডালিম ব্যাঙ্কের ওই কর্মীকে আঘাত করেন বলে অভিযোগ। দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। স্থানীয়দের একাংশ পুলিশকে জানিয়েছেন, সে সময়ে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার একটি পেপার ওয়েট ছুড়ে মারেন ডালিমকে লক্ষ্য করে। পাশাপাশি ব্যাঙ্কের অ্যালার্মও বাজিয়ে দেওয়া হয়। নীচে এটিএমের দায়িত্বে থাকা এক নিরাপত্তারক্ষী ব্যাঙ্কের গেট লক করে দেন বাইরে থেকে। পুলিশকেও ফোন করা হয়।

    পুলিশ ডালিমকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ডালিম দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ় কলেজ থেকে অনার্স নিয়ে পাশ করেছিলেন। বাড়িতে বাবা–মা ও স্ত্রী রয়েছেন। বাবা বেসরকারি সংস্থার কর্মী। ডালিম স্থানীয় একটি নামী দুর্গাপুজো কমিটির সদস্য বলের‍্যও জানা গিয়েছে। কেন এমন লুটের ছক?

    পুলিশের দাবি, ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় একত্রিশ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ডালিম। অথচ তাঁর মাসিক বেতন একচল্লিশ হাজার টাকা। নতুন ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন চব্বিশ লক্ষ টাকায়। বাড়ি সংস্কারের কিছু কাজের জন্য আরও পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। মোটরবাইকের জন্য দু’লক্ষ টাকা ঋণ ছিল। এত টাকার লোন নিয়ে শোধ দিতে পারছিলেন না তিনি। সেই কারণেই তিনি বাড়ির কাছেই সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে খেলনা বন্দুক দেখিয়ে লুটের ছক কষেন। তবে ওই ব্যাঙ্ক থেকেই তিনি ঋণ নিয়েছিলেন কি না, সে বিষয়ে পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। তদন্তকারীদের প্রাথমিক দাবি, এই ঘটনায় ডালিম একাই জড়িত। বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত জেলে যেতে হলো তাঁকে।

  • Link to this news (এই সময়)