থানায় এসে আদিবাসী নাবালিকার করুণ আর্তি ‘বিয়ে নয়, আরও পড়াশোনা করতে চাই’
বর্তমান | ১২ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, পতিরাম: ‘আমি বিয়ে করতে চাই না। বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই।’ শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে পালিয়ে থানায় এসে কাতর আর্জি দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর।
আদিবাসী নাবালিকার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখে সঙ্গে সঙ্গেই উইমেন হেল্প ডেস্কের মহিলা পুলিস কর্মীরা তাঁকে নিয়ে যান বালুরঘাট থানার সেকেন্ড অফিসার তথা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার পুলিস অফিসারের কাছে। নাবালিকার মুখে পুরো বিষয় শুনে পুলিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। থানাতেই চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কর্নারে নাবালিকাকে নিরাপদে রেখে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিস।
পুলিস সূত্রে খবর, ১৭ বছর বয়সী ওই নাবালিকার বিয়ে ঠিক করেছে তার পরিবার। মেয়ের অমতে আশীর্বাদও হয়ে গিয়েছে। বৈশাখে বিয়ে হওয়ার কথা। তার আগে কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা থানায় এই আদিবাসী নাবালিকা। বালুরঘাট সদর ডিএসপি হেডকোয়ার্টার বিক্রম প্রসাদ বলেন, এক নাবালিকা থানায় এসে জানিয়েছে, সে বিয়ে করতে চায় না। জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এই নাবালিকার বাড়ি বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদার গ্রামপঞ্চায়েতের একটি গ্রামে। সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। গতবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে একটি বিষয়ে ফেল করেছিল। এবছর পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও পরিবারের তরফে বিয়ের তোড়জোড় শুরু করায় পরীক্ষা দিতে পারেনি।
ছাত্রীটির কথায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে ঠিক করা হয়। জেলার দৌলতপুরের একটি যুবকের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। মানসিক চাপে পরীক্ষা দিতে পারিনি। বাড়ি থেকেও পরীক্ষা দিতে দেয়নি। সামনে বৈশাখেই আমাকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বাড়িতে। আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। তাই সাহস করে পুলিসের কাছে এসেছি।
পুলিস সূত্রে খবর, বেশ কিছুদিন ধরে এই নাবালিকাকে বাড়িতেই নজরবন্দি করে রাখছিল তার বাবা ও মা। শুক্রবার দাদুর সঙ্গে বালুরঘাট শহরে ওষুধ কিনতে আসে নাবালিকাটি। দাদুর চোখ এড়িয়ে সে এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করে। তারপর বান্ধবীকে নিয়ে সোজা থানায় চলে আসে মেয়েটি। নাবালিকাটির মা অবশ্য মেয়ের বিয়ের পক্ষেই মত দিয়েছেন। ফোনে নাবালিকার মা বলেন, কম বয়সে অনেকের বিয়ে হচ্ছে, সেটা প্রশাসন দেখে না। আদিবাসী মেয়েটির মেয়ের দাবি, কিছুদিন পরেই আমার মেয়ের ১৮ বছর হয়ে যাবে। এবছরই যেখানে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত গড়তে প্রশাসনের তরফে বৈঠক ও অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে, সেখানে শুক্রবারের ঘটনায় অসচেতনতার ছবি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে পুলিস প্রশাসন।