প্রায় দেড়শো মহিলার নামে ঋণ নিয়ে পলাতক দম্পতি, তোলপাড় রঘুনাথপুর, পাকড়াও এক
বর্তমান | ১২ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: গৃহবধূ ও তার স্বামী মিলে রঘুনাথপুর শহরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১৬০ জন মহিলার পরিচয়পত্র হাতিয়ে কোটি টাকার ঋণ তুলেছিল। কিন্তু সেই টাকা মহিলাদের না দিয়ে নিজেরাই হাতিয়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগে বৃহস্পতিবার রঘুনাথপুর থানার পুলিস একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম জয়ন্ত গড়াই। তার বাড়ি রঘুনাথপুর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ধৃতকে শুক্রবার রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। তার স্ত্রী পলাতক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৬০ জন মহিলার নামে ঋণ তুলে গৃহবধূ ও তার স্বামী উধাও হয়ে গিয়েছিল। এক একজনের নামে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। সেই ঋণ ওই বধূই শোধ করবে বলে জানিয়েছিল। শুধু মহিলাদের থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছিল। পরিবর্তে মহিলারা লোনের টাকা তুলে দেওয়ার জন্য ২০০০ করে টাকা ও নতুন শাড়ি পেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে লোন দেওয়া ব্যাঙ্ক ও সংস্থাগুলির কর্মীরা মহিলাদের কাছে লোনের টাকা চাইতে আসে। তখনই মহিলারা জানতে পারেন যে, জয়ন্ত এবং তার স্ত্রী তাঁদের নামে লোন নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রায় তিন মাস আগে মহিলারা প্রতারিত হয়েছে জানতে পেরে জয়ন্ত ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিল।
মহিলাদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, জয়ন্ত এবং তার স্ত্রী প্রথমে ওয়ার্ডের কয়েকজন গরিব মহিলাকে টাকার প্রলোভন দেখায়। তাঁদের জানানো হয়, ব্যাঙ্ক ও কয়েকটি সংস্থা থেকে মহিলাদের মোটা টাকা লোন করিয়ে দেবে। লোনের টাকা সে-ই শোধ করবে। বরং তথ্য দেওয়ার জন্য তাঁদের কিছু টাকা দেওয়া হবে। এভাবে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের থেকে আধার, ভোটার, ফোন নম্বর নেওয়া হয়। পাশাপাশি কিছু ফর্মে সই করানো হয়। তারপর তাদের সকলের নামে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট করে দেওয়া হয়। অ্যাকাউন্টগুলি অভিযুক্তরা নিজেদের কাছেই রাখে। পরবর্তী সময়ে ওয়ার্ডের মহিলাদের নিয়ে গিয়ে লোনের টাকা তোলায়। তারপর প্রত্যেক মহিলার হাতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা দিয়ে বাকিটা নিজেদের কাছে রেখে দেয়। এভাবে কয়েক মাস কেটে যায়। কিন্তু কোনও ব্যাঙ্ক বা সংস্থার কোন আধিকারিক লোন পরিষদের জন্য মহিলাদের কিছু বলেনি। ফলে মহিলাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। এদিকে লোনের মোটা টাকা নিয়ে স্বামী- স্ত্রী বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়।
এক অভিযোগকারী চন্দনা বাদ্যকর বলেন, জয়ন্ত ও তার স্ত্রী আমাদের জানিয়েছিল লোন করিয়ে দেবে। তার জন্য আমাদের কিছু টাকা দেওয়া হবে। লোনের জন্য এক টাকাও আমাদের শোধ করতে হবে না। আমরা তাদের কথায় বিশ্বাস করে গ্রুপ খুলে লোনের টাকা তুলে দিয়েছিলাম। কয়েক মাস আগে হঠাৎ কয়েকজন আধিকারিক আমাদের কাছে লোনের টাকা চাইতে আসে। তখন আমরা জয়ন্তর বাড়িতে বিষয়টি জানতে চাই। গিয়ে দেখি বাড়িতে তালা ঝোলা রয়েছে।
ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলার দীনেশ শুক্লা বলেন, অভিযুক্তরা প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো প্রতারণা করেছে। আমরা পুলিস প্রশাসনের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছি।
পুলিস জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযুক্ত জয়ন্তকে রঘুনাথপুর এলাকায় ঘুরতে দেখে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে পুলিস হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।