মিড-ডে মিলে দুর্নীতি, সহকারী শিক্ষককে তালাবন্দি করে বিক্ষোভ
বর্তমান | ১২ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: আনন্দবাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষককে তালা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকরা। সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিড ডে মিলে দুর্নীতি, নিয়মিত স্কুলে না আসা সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে তাঁরা জানান। শুধু তাই নয়, ওই সহকারী শিক্ষকের গাফিলতির কারণেই বিগত তিন মাস ধরে স্কুলে বিদ্যুৎ নেই। শুক্রবার বেলার দিকে কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার ভালুকা পঞ্চায়েতের আনন্দবাস এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। শিক্ষককে স্কুলের ভিতরে তালা বন্ধ করে রেখে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। শেষপর্যন্ত পুলিসের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ তুলে নেন তাঁরা। স্কুল শিক্ষককে উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানায় আনা হয়।
জানা গিয়েছে, ওই প্রাথমিক স্কুলের সহ শিক্ষকের নাম সুকান্ত সুর। তিনি আগে সেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদে ছিলেন। ২০১৭ সালে ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করার কিছুদিন সেই পদের দায়িত্ব পান তিনি। সেই সময় স্কুলের মিড ডে মিল সহ বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করতে শুরু করেন তিনি। পদে থাকাকালীন, স্কুলের মিড ডে মিলের টাকা নয়ছয়, স্কুলের উন্নয়নের টাকার তছরুপ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম করেন বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। অভিভাবকদের সুরেই সুর মিলিয়েছেন স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কর্মকার।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। অভিযোগ, পদ হারানোর পরেও সুকান্তবাবু নতুন প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। দায়িত্ব থাকাকালীন স্কুলের দীর্ঘদিনের ইলেকট্রিক বিল না দেওয়ার জন্য বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ পর্ষদ। ফলে তীব্র গরমে ক্লাস করতে হচ্ছিল পড়ুয়াদের। এই সমস্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে সহকারী শিক্ষক শাসকদলের ভয় দেখায় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, স্কুলে না এসে ওই শিক্ষক কৃষ্ণনগরে ট্রাভেল এজেন্সির কাজ করেন বলেও জানা গিয়েছে। যা নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছিল।
শুক্রবার সুকান্তবাবু স্কুলে আসতেই অভিভাবকরা তাঁকে চেপে ধরেন। এদিন বারোটা নাগাদ স্কুলের অভিভাবকরা তাঁকে স্কুলের একটি ঘরে তালাবন্ধ করে আটকে রাখেন। প্রায় দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখা হয়। অভিভাবক মিলন শেখ বলেন, আমার ছেলে এই স্কুলে পড়ে। একদিন স্কুলে এসে জানতে পারি, এখানে কারেন্ট নেই। কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, শিক্ষক সুকান্ত সুরের কাছে সমস্ত হিসেব রয়েছে। কিন্তু তিনি নতুন প্রধান শিক্ষককে সবকিছু বুঝিয়ে দেননি। প্রধানশিক্ষককে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হুমকি দেন। সহকারী শিক্ষক স্কুলে আসেন না। তারপর একদিন স্কুলে এসে অনুপস্থিতির দিনগুলির ঘরে সই করে দেন। মিড ডে মিলের খাবারও খুব খারাপ দেন।
প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কর্মকার বলেন, আমি গতবছর স্কুলে জয়েন করেছি। কিন্তু উনি আমাকে চার্জ বুঝিয়ে দেননি। বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্তা করেছেন। কয়েক মাস আগে ওঁর ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে আমাকে ডাকেন। সেখানে জোর করে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেন, উনি নাকি সব বুঝিয়ে দিয়েছেন। স্কুলের ব্যাংকের বই, চেক বই সব কিছুই ওঁর কাছেই রয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ সত্য। অভিযুক্ত শিক্ষক সুকান্ত সুর বলেন, এই বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরেই জলঘোলা চলছে। ডিপিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে অনেকবার হেয়ারিং হয়েছে। সেখানে সমস্ত তথ্য আমি জমা করেছি। অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। • নিজস্ব চিত্র