নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চাকরিহারাদের দাবি মেনে দেড় সপ্তাহের মধ্যে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে সম্মত হল শিক্ষাদপ্তর। সম্ভবত ২১ এপ্রিলেই যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা, প্রায় ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সরকারের তরফে প্রকাশ্যে আনা হবে। শুক্রবার বিকাশ ভবনে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। হাজির ছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তারাও। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা আলোচনায় এব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের উদ্ধার করা নথি থেকেই ওই তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে, তার আগে বিষয়টির আইনি দিক খতিয়ে দেখতে চলেছে দপ্তর।
চাকরিহারাদের ১৩ জনের একটি প্রতিনিধিদল এদিন বিকাশভবনে যায়। প্রথম থেকেই তাঁদের দাবি ছিল, যোগ্য এবং অযোগ্যের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করতে হবে সরকারকে। সামনে আনতে হবে সমস্ত ওএমআর শিট এবং যোগ্যদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে। তাতে প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্ট যে ফের পরীক্ষা নিয়ে নতুনভাবে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে এবং অযোগ্যদের বেতন ফেরাতে বলেছে, তা নিয়ে সরকার পরে সিদ্ধান্ত নেবে। তার আগে পর্ষদের করা আবেদনের শুনানি রয়েছে আগামী ১৭ এপ্রিল। সরকার এবং এসএসসির তরফে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিভিউ পিটিশনও করা হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
চাকরিহারারা জানেন, এসএসসি’র কাছে ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ নেই। সরকারও তা স্বীকার করছে। গাজিয়াবাদ থেকে সিবিআইয়ের উদ্ধার করে আনা হার্ডডিস্কের নথিই ভরসা। সেটা পরে আদালতের নির্দেশে তুলে দেওয়া হয়েছিল এসএসসি’র হাতে। তার ভিত্তিতেই এই নয়া তালিকা তৈরি করবে এসএসসি। যদিও, কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বৈঠক শেষে কোনও বিষয়েই মন্তব্য করতে চাননি। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য মনে করিয়ে দেন, এসএসসি সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য-অযোগ্যের নথি জমা দেয়নি, এই প্রচার সম্পূর্ণ ভুল। বিরোধীদের তৈরি বয়ানে কেউ যাতে বিশ্বাস না করেন, সেই আহ্বানও জানান। এসএসসি সেই তালিকা কোর্টে জমা দিলেও আদালত কেন তাতে মান্যতা দেয়নি, সেবিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। এদিনও চাকরিহারাদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ভরসা রাখুন। সরকার সবরকমভাবে চাকরিহারাদের পাশে রয়েছে।’
বৈঠক শেষে নিয়োগ বাতিল হওয়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিরা জানান, চাকরি ফেরত পাওয়ার আগে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। তবে, সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরে তাঁরা খানিকটা আশ্বস্ত। যেভাবে চাইছিলেন, সেভাবেই যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে সরকার। সেই তালিকা ফের আদালতে জমা দেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে। তাতে অনেকটাই চাপমুক্ত হয়েছেন তাঁরা। যদিও, আলোচনার পাশাপাশি এসএসসি অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ তথা সার্বিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।