নয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন অব্যাহত
বর্তমান | ১২ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি: সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ অব্যাহত থাকল শুক্রবারও। এদিন কলকাতায় মানববন্ধন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা পার্ক সার্কাসে মিছিল করেন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করেন। একাধিক কর্মসূচির কারণে
যানজটের কবলে পড়তে হয় বহু মানুষকে। প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা-বারুইপুর রোড ও মুর্শিদাবাদের একাংশে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড আগামী ২৬ এপ্রিল ব্রিগেডে সভার ডাক দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়িতে আলো নিভিয়ে প্রতিবাদের কর্মসূচিও নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিন আমতলায় বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। তার জন্য আমতলা-বারুইপুর রোড যখন ভিড়ে থিক থিক করছে, তখন পুলিসের একটি গাড়ি ভিড়ে আটকে পড়ে। সেই গাড়িতে এক আসামি ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাই হর্ন দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতে চান গাড়ির চালক। তাতেই মিছিলের একাংশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিস উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিন বেলা ৩টে থেকে সাড়ে ৪টে পর্যন্ত কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল আমতলার আশপাশের রাস্তাগুলিও। ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলা জানিয়েছে, ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। ভাঙচুর যারা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও সূতিতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় ওয়াকফ আইন বিরোধী কর্মসূচি ঘিরে। জাতীয় সড়কের উপর সাজুর মোড় ও ডাকবাংলো মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। প্রথমে পুলিস তাদের বুঝিয়েসুঝিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করে। তাতে কাজ না হওয়ায় বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয় পুলিস। তখন এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রর চেহারা নেয়। পুলিসের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শেষপর্যন্ত সন্ধ্যায় বিএসএফ নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পাঁচটি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। রাতের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সামশেরগঞ্জে পুলিস ট্রাফিক গার্ডের অফিসে ভাঙচুর চলে। দুই পুলিস অফিসারকে বেধড়ক মারধর করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিসকর্মী গুরুতর জখম হন। তাঁদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ানে একাধিক দোকানেও ভাঙচুর হয়। বিকেলের দিকে সূতিতে গুলি চলেছে বলে খবর মিলেছে। যদিও পুলিস এই ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে।
কলকাতায় এদিন এ সংক্রান্ত একাধিক কর্মসূচি থাকলেও কোথাও কোনও অশান্তি বা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। নারকেলডাঙা থেকে রাজাবাজার হয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত মানববন্ধন হয়। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ চলতে থাকে। প্রায় আধ ঘণ্টা চলে সেই কর্মসূচি। কিছুক্ষণের জন্য রাজাবাজার মোড়ে যানজট হয়। মানববন্ধন শেষ হতেই উদ্যোক্তাদের তরফে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিল, কেউ যেন রাস্তা অবরোধ না করে। কর্মসূচি শেষ হয়ে গিয়েছে। এদিন দুপুরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট অবরোধ করেন। সেখান থেকে মা উড়ালপুলের দিকে যেতে চান তাঁরা। তবে পুলিসের সঙ্গে কথাবার্তার পর তাঁরা ফিরে যান। এসব কারণে বেশ কিছুক্ষণ পার্ক সার্কাস অবরুদ্ধ হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার অন্তর্গত রামনগর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই ইস্যুতেই সভার ডাক দেওয়া হয়েছিল। বাদুড়িয়াতেও নয়া ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় বিশাল মিছিল হয়। কয়েক ঘন্টা ধরে পথ অবরোধ চলে। জগদ্দল থানায় তুমুল বিক্ষোভ হয়। এর ফলে থানার সামনে ঘোষপাড়া রোড বন্ধ হয়ে যায়। বনগাঁ শহরেও মিছিল হয়।