যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ্যে আনার দাবি চাকরিহারাদের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ এপ্রিল ২০২৫
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার দুপুরের পর সল্টলেকের বিকাশ ভবনে চাকরিহারাদের সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বৈঠক শুরু হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা দুয়েক পরেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এসএসসি-র চেয়ারম্যান, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি, রাজ্যের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, আইন শাখার আধিকারিকেরা এবং চাকরিহারাদের ১৩ জন প্রতিনিধি। প্রায় তিনঘন্টা ধরে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে মূলত যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ্যে আনার দাবি তোলা হয়েছে।
বিকাশ ভবনের ছয় তলায় এই বৈঠক হয়। একতলায় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের একতলায় দাঁড়াতে বলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর চাকরি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, উত্তরপত্রের ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ করলে সেই জট কাটতে পারে বলে দাবি করেন চাকরিহারারা। সেই সংক্রান্ত আলোচনা চলে বিকাশ ভবনে। আপাতত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন চাকরিহারাদের প্রতিনিধিরা। আলোচনার পর বিকাশ ভবন থেকে বেরিয়ে তাঁরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
বৈঠক শেষে চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে মূলত দু’টি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তাঁরা। এক, যোগ্য-অযোগ্যদের নামের তালিকা এবং ওএমআর-এর মিরর ইমেজ প্রকাশ্যে আনতে হবে। দুই, আইনি প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। চাকরিহারাদের প্রতিনিধিরা আরও বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছেন। আগামী ২১ এপ্রিলের মধ্যে তা প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করবে রাজ্য সরকার।’
তবে ২২ লক্ষ ওএমআরের মিরর ইমেজ নিয়ে জটিলতার কথা বললেন প্রতিনিধিরা। জানানো হয়েছে, এসএসসির কাছে কোনও মিরর ইমেজ নেই। যদি তা থাকত, তা হলে সিবিআই তা খুঁজে পেত। সিবিআইয়ের দেওয়া মিরর ইমেজ রয়েছে মাত্র। চাকরিহারাদের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে এসএসসি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তাঁরা যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছেন। আগামী রবিবারের মধ্যে সেই কাজ শেষ হয়ে যেতে পারে। আইনি পরামর্শ নিয়ে আগামী ২১ এপ্রিলের মধ্যে তা প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করা হবে।’
এদিকে শুক্রবার ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র সদস্যেরা এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। সেই মতো মিছিল হয় সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে এসএসসি ভবন পর্যন্ত। সেইমতো বৈঠক চলাকালীন নিচে চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভ ও মিছিল চলে। সেখানে হাজির হন হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এবং বর্তমানে তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এসএসসি দপ্তরের সামনে গত দুদিন ধরে চাকরিহারা শিক্ষকদের অনশন চলছে। তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হল অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়কে। উঠল ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও। তার মাঝেই নিজের বক্তব্য জানান এই বিজেপি সাংসদ। সেখান থেকে চাকরিহারাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গত পরশু আমরা চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম দ্রুত যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা তৈরি করুন। বলেছিলাম, সেই তালিকা নিয়ে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব, যাতে যোগ্যদের গায়ে কোনও আঁচ না লাগে। আশা করেছিলাম, দু’দিনের মধ্যে হয়তো সেই তালিকা প্রকাশ্যে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। আমরা রাজ্য সরকারকে আর দু’ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। তার মধ্যে যদি তারা এসএসসিকে নির্দেশিকা পাঠান, তা হলেই বোঝা যাবে চাকরি ফেরানোর সদিচ্ছা তাঁদের রয়েছে।’
অন্যদিকে এসএসসি দপ্তরের এই ঘটনায় প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিত বাবুকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘শুনলাম চাকরিহারাদের অনশনমঞ্চে গিয়ে অভিজিতকে গো ব্যাক শুনতে হল। এটা তো হওয়ারই ছিল! উনি তো গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, আমি এঁদের চাকরি খেয়েছি। কত বড় পৈশাচিক উল্লাস! তার পর তিনি ওখানে গিয়েছেন, চাকরিহারারা ওঁকে তাড়িয়ে দেবে না তো কী করবে? এই দ্বিচারিতার রাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁদের মুখোশ খুলে দিন।’
প্রসঙ্গত প্রথমে এই বৈঠকে চাকরিহারাদের মধ্যে কতজন অংশগ্রহণ করবে তা নিয়ে শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে চাকরিহারাদের দড়ি টানাটানি শুরু হয়। চাকরিহারারা প্রথমে ঠিক করেন তাঁদের মোট ১৩ জন প্রতিনিধি এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। সেই মতো প্রতিনিধিদের একটি তালিকাও তৈরি হয়ে যায়। হুমায়ুন ফিরোজ মণ্ডল, সঙ্গীতা সাহা, আবদুল্লা মণ্ডল, চিন্ময় মণ্ডল, সুজয় সরদার, প্রলয় কুমার জামাদার, আজহারউদ্দীন, সেলিনা আখতার, স্বপন বিশ্বাস, মেহবুব মণ্ডল, দিথিশ মণ্ডল, মৃন্ময় মণ্ডল এবং তাপস সাঁতরা।
কিন্তু বিকাশ ভবনে মাত্র আট জনকে যেতে বলা হয়। তার জবাবে শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা জানান, কমপক্ষে ১২ জনকে অনুমতি না দিলে, তাঁরা বৈঠকে বসবেন না। সেই মতো প্রথমে আটজন বিকাশ ভবনে প্রবেশ করলেও তাঁরা বৈঠকে যাননি। এরপর শিক্ষা দপ্তর ১০জনকে প্রবেশের অনুমতি দেয়। পরে চাকরিহারাদের দাবি মেনে নিয়ে ১২জনকেই প্রবেশের অনুমতি দেয় শিক্ষা দপ্তর। চাকরিহারা শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ১২ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এই ১২ জনের মধ্যে ছিলেন নবম-দশমের ছ’জন, একাদশ-দ্বাদশের চার জন এবং গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি-র এক জন করে চাকরিহারা প্রতিনিধি। পরে আরও একজনকে বৈঠকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে চাকরিহারা শিক্ষকদের ১৩ জন প্রতিনিধির সঙ্গে সন্ধ্যা প্রায় ৭টা পর্যন্ত বৈঠক চলে।