এই সময়, সাগরপাড়া: চুপিসাড়ে নাবালিকার বিয়ে ঠিক করেছিল পরিবার। রাতের অন্ধকারে সারা হয়েছিল সব আয়োজন। পড়তে ইচ্ছুক নাবালিকার বুদ্ধির জোরে ভেস্তে গেল বিয়ে। মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়া থানা এলাকার ঘটনা। পুলিশ–প্রশাসন নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাড়ি গিয়ে বিয়ে বন্ধের কথা বললে প্রথমে রাজি হয় পরিবার। কিন্তু পরে ফোন করে পরিযায়ী শ্রমিক বাবা মেয়েকে খুনের হুমকি দেন। তাতে দমেনি মেয়ে। বরং ফের এক বার যোগাযোগ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে।
নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী আরও পড়াশোনা করতে চায়। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে সে। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে মানা পরিবারে। পরিযায়ী শ্রমিক বাবা কেরালায় রয়েছেন। সেখান থেকেই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করেছিলেন। পাত্র ওই থানা এলাকারই খয়রামারির বাসিন্দা।
পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক সে–ও। সংখ্যালঘু পরিবারে দুপুরে বিয়ের চল থাকলেও, কেউ যাতে জানতে না পারে, তার জন্য রাতের অন্ধকারে সব আয়োজন হয়েছিল। পাশেই মামাবাড়ি। সেখানে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা চলছিল। নাবালিকা উপায় না দেখে নিজের এক সহপাঠীকে ফোন করে। জানায়, জোর করে বিয়ে দিলে সে আত্মঘাতী হবে। ওই সহপাঠীর কাছ থেকে খবর পেয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গিয়ে পরিবারের লোককে বোঝায়।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য অর্পিতা মণ্ডল বলেন, ‘ওই নাবালিকার এক সহপাঠী ফোন করে জোর করে বিয়ে দেওয়ার খবর দেয়। খবর পেয়ে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার ও এলাকার আশাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে নাবালিকার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। নাবালিকার মা বিয়ে ভেঙে দিতে রাজি হন।’
কিন্তু সেখানেই বিষয়টি মেটেনি। তাঁরা চলে যেতেই নাবালিকার বাবা কেরালা থেকে বাড়িতে ফোন করেন। হুমকি দেন, বিয়েতে রাজি না–হলে বাড়ি এসে মেয়েকে খুন করে ফেলবেন। কিন্তু তাতে মোটেই ভয় পায়নি সাহসিনী। বিকেলে সে ফের ফোন করে অর্পিতাকে। এর পরে সাগরপাড়া থানার অফিসারদের নিয়ে ফের এক বার ওই বাড়িতে যান অর্পিতা। দীর্ঘক্ষণ বোঝানো পরে রাজি হন তাঁরা। অর্পিতা বলেন, ‘নাবালিকার মা ও মামাদের বুঝিয়ে শেষপর্যন্ত বিয়ে ভেস্তে দেওয়া গিয়েছে।’
সাগরপাড়া থানার ওসি মহম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘ওই নাবালিকার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার পরিবার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওই নাবালিকা পড়াশোনা করতে চায়। বিয়ে দিলে আত্মাঘাতী হবে বলেও সে তার সহপাঠীকে জানিয়েছিল। ওই সহপাঠী ফোন করে গোটা বিষয়টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক সদস্যকে জানালে তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিয়ে ভেস্তে দিয়েছে।’