অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ন্যাক পরিদর্শকদের বিপুল টাকা ও উপঢৌকনের বিনিময়ে এ++ তকমা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে গোটা দেশে তোলপাড় চলছে। এর জেরে এ বার ন্যাক পরিদর্শনের ধাঁচটাই পাল্টে দেওয়ার পথে হাঁটছেন ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ( ন্যাক বা জাতীয় মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি পরিষদ)। ন্যাকের কেলেঙ্কারিতে মাঝে কিছু দিন বন্ধ ছিল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিদর্শন। এ বার বেঙ্গালুরুর সদর দফতর থেকে পাঠানো নির্দেশিকায় ন্যাক কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন অসমাপ্ত থাকা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য অনলাইন পরিদর্শনের বিষয়টি ঘোষণা করেছেন।
গত তিন বছরে এ রাজ্যের বড় সংখ্যক কলেজই ন্যাক স্বীকৃতি আদায় করেছে। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের কোনেরু লক্ষ্মাইয়া এডুকেশন ফাউন্ডেশনের কেলেঙ্কারির পরে বেশ কয়েকটি কলেজের ন্যাক স্বীকৃতি পর্ব মাঝপথে ঝুলে গিয়েছিল। ন্যাক কর্তৃপক্ষের নতুন নির্দেশ, ১৫ মে-র মধ্যে সেই কলেজগুলির পরিদর্শন অনলাইন পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী পঠনপাঠন, গবেষণার প্রসারে ন্যাক স্বীকৃতি কলেজগুলির জন্য আবশ্যক। রাজ্যে ৫০৬টি কলেজের ৮০ শতাংশই গত বছর তিনেকে ন্যাক মূল্যায়নের আওতায় এসেছে। এই অবস্থায় অন্ধ্রপ্রদেশের দুর্নীতির অভিযোগে মাস দুয়েক আগে ন্যাক পরিদর্শন বন্ধ হওয়ায় বাকি কলেজগুলি দুশ্চিন্তায় পড়ে। এখন আমরা কিছুটা স্বস্তিতে।”
তবে অনলাইন পদ্ধতিতে ন্যাকের পরিদর্শন জারি রাখার প্রক্রিয়াটিও রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার কলেজের জন্য কিছুটা কঠিন। কী ভাবে সব কিছু সারতে হবে ন্যাকের নির্দেশিকায় তা বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিকাশ ভবনে উচ্চ শিক্ষা দফতরের শীর্ষ কর্তারা এবং রাজ্যের ন্যাক সংক্রান্ত মেন্টর বা নির্দেশক কমিটিও ন্যাক পরিদর্শনের অপেক্ষায় থাকা গোটা ৫০ কলেজের সঙ্গে বিশদে বৈঠক করেছেন।
ভিন রাজ্য থেকে আসা ন্যাকের পরিদর্শকদের তুষ্ট করতে কখনও সখনও কলকাতার কাছের দূরের কলেজেরও কালঘাম ছুটেছে বলে অভিযোগ। গুন্টুরের ঘটনার আগেই ভাল গ্রেডের ঝোঁকে দুর্নীতির প্রবণতা দেখে ন্যাক কর্তৃপক্ষ গ্রেড তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরিদর্শকদের কলেজ সফর তখনই নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হয়েছিল। ঠিক হয় ভবিষ্যতে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হাইব্রিড পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হবে। অন্যত্র শুধু অনলাইন মূল্যায়ন চলবে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এর পরে গুন্টুরের ঘটনার ধাক্কায় ন্যাকের পরিদর্শনকারী দল এবং ন্যাক কমিটির ভিতরের আধিকারিকের নামেও চার্জশিট পেশ করেছে পুলিশ। দেশ জুড়ে ন্যাকের অন্তত ১০০০ জন পরিদর্শককে সরিয়েও দেন কর্তৃপক্ষ।
সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় সব কলেজ তথা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্পষ্ট বলা হয়, অনলাইন পরিদর্শনের দিনেই কারা পরিদর্শক তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি জানতে পারবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে পরিদর্শকদের কোনও উপহার বা টাকা দিতে নিষেধ করা হয়। বলা হয়, তাঁরা কোনও প্রযুক্তিগত সমস্যা ছাড়া পরিদর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট কলেজগুলিকেই অনলাইন সফরের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে তাঁদের সহায়তা করা হচ্ছে।