মেট্রো সফরে টোকেন খোয়া যাওয়ার ক্ষতি এড়াতে কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কিউআর কোড যুক্ত কাগজের টিকিট ব্যবহারে জোর দিয়েছেন। পাতলা কাগজের ওই টিকিটের ব্যবহারে মেট্রো কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষতি কমলেও যাত্রীদের ভোগান্তি অনেক বেড়েছে বলে অভিযোগ। টিকিট স্ক্যান করতে গিয়ে হয়রানি, বিলম্বের কারণে ট্রেন ধরতে না পারার ঘটনায় বিরক্তির পারদ চড়ছে যাত্রীদের মধ্যে।
মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগে স্বয়ংক্রিয় গেটের সঙ্গে বসানো নির্দিষ্ট স্ক্যানারে ওই টিকিটের কোড স্ক্যান করার পরেই গেট খোলে। অভিযোগ, ভিড়ের সময়ে গেট ঠিক মতো না খোলায় যাত্রীদের হয়রানি হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে স্টেশনের প্রবেশপথে মোতায়েন কর্মীর সাহায্য নিয়ে আলাদা করে গেট খুলে যাত্রীদের বেরোতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য কিউআর কোড যুক্ত কাগজের টিকিট স্ক্যানারের কাছে এনে স্ক্যান করার ক্ষেত্রে যাত্রীদের ভুলের দিকেই আঙুল তুলছেন। তাঁদের দাবি, ওই টিকিট স্ক্যানারের থেকে কয়েক সেন্টিমিটার দূরে ধরা উচিত, যাতে টিকিটে ছাপানো কোড যন্ত্র ঠিকমতো পড়তে পারে।
কাগজের কিউআর কোডের টিকিট নিয়ে সমস্যা নতুন মেট্রোপথগুলির তুলনায় উত্তর-দক্ষিণে বেশি। ভিড়ে ওই টিকিট ব্যবহার করতে গিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া ময়দান, হাওড়া, মহাকরণ এবং এসপ্লানেড ছাড়াও শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। যদিও ওই মেট্রোপথ ছাড়াও শহরের নিউ গড়িয়া-রুবি এবং জোকা-মাঝেরহাট মেট্রোপথের বিভিন্ন স্টেশনের স্বয়ংক্রিয় গেটগুলি নতুন। ওই সব পথেও কিউআর কোড স্ক্যান করতে গিয়ে তাড়াহুড়োর মুহূর্তে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা।
পাশাপাশি, উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর সব স্টেশনেই রয়েছে পুরনো গেট। কেবল এসপ্লানেড ও কবি সুভাষ স্টেশনে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি নতুন গেট। প্রায় দেড় দশকের পুরনো ওই সব গেটে স্মার্ট কার্ড এবং প্লাস্টিকের টোকেন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। গেটগুলির রক্ষণাবেক্ষণের হালও খারাপ। জনা ১০-১২ কর্মী পুরো মেট্রোপথে ওই কাজের দায়িত্বে থাকলেও প্রায়ই বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় গেট বিকল হলে তা মেরামতির উপযুক্ত যন্ত্রাংশ মেলে না বলে অভিযোগ। পুরনো ওই সব গেটেই যাত্রীদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়।
যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘মেট্রো কর্তৃপক্ষ প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে নানা খাতে বিপুল খরচ করলেও পুরনো গেট বদলের ব্যবস্থা করছেন না কেন?’’ কম সময়ের ব্যবধানে ট্রেন চালানো ছাড়াও স্টেশনে যাত্রীদের মসৃণ আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করার মতো বিষয়গুলি উপেক্ষিত কেন, সেই প্রশ্নও উঠছে।
বিভিন্ন সময়ে ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেট্রো কর্তৃপক্ষ খরচ বাড়াচ্ছেন বলেও মনে করছেন প্রাক্তন এবং বর্তমান কর্তাদের একাংশ। কলকাতা মেট্রোর প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সারা দেশে সরকার কাগজবিহীন অফিসের কথা বলছে, সেখানে ঘোষিত নীতির উল্টো পথে হেঁটে কলকাতা মেট্রোয় কেন কাগজের টিকিট চালু হল, সেটাই বোধগম্য নয়। ওই টিকিটের জন্য মেট্রো স্টেশন চত্বর নোংরাও হচ্ছে।’’
মেট্রোকর্মীদের দাবি, মোবাইল টিকিট এবং ইউ পি আইয়ের ব্যবহার শেখানো নিয়ে তাঁদের এতই ব্যস্ত থাকতে হয় যে কিউআর কোডের টিকিটের ব্যবহার পদ্ধতি যাত্রীদের বোঝানোর সময় মেলে না। ফলে ওই টিকিট ব্যবহারে যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যা বিড়ম্বনা বাড়াচ্ছে কর্মীদের।
সেই সঙ্গে গেটের স্ক্যানার যথেষ্ট প্রশস্ত না হওয়ার অভিযোগও উঠেছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য যন্ত্রের সমস্যার কথা মানতে চাননি। তাঁদের অভিযোগ, ব্যবহারের ত্রুটির কারণেই কিছু সমস্যা হচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মোবাইল টিকিটের কোড এবং স্মার্ট কার্ড ব্যবহারে যাত্রীদের উৎসাহিত করতে চান বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।