নজরুল তীর্থ থেকে বেরিয়ে দেখি, আগুনে পোড়া ধূসর কলকাতা উধাও। শহরে দমকা হওয়া। বাতাসে উড়ছে ওড়না। অষ্টাদশী এলোচুল। হল থেকে বেরিয়ে আসছে ঘাসফুল হাসি। সূর্যমুখী আলো। গুঁড়ো বৃষ্টির আহ্লাদে ছলকে উঠছে টুকরো টুকরো জীবন। দিনযাপনের ক্লেদ মুছে তীব্র হচ্ছে বেঁচে থাকার আর্তি।
গাড়িতে উঠতেই ঝেঁপে বৃষ্টি। আর উইন্ডস্ক্রিনে ওয়াইপারের ঘষায় দৃশ্যের আলপনা। আমাদের অনেকের মতো গরমিলের ঐকিক নিয়ম ফেলে উত্তরবঙ্গ ছাড়ে পূর্ণা। বুকে জড়িয়ে নেয় নতুন শহর। তখন শুধুই শৃঙ্গজয়ের আনন্দ। সমাজমাধ্যমে অনুরাগীদের, অনুসরণকারীদের উল্লাস। ঝকঝকে বয়ফ্রেন্ড। সেলুলয়েডের হাতছানি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ফ্ল্যাশলাইটের আলো। আর জীবন মুঠোয় করে চাবুক মারা অশ্বারোহী মাদকতা।
তার পর একদিন গভীর অন্ধকারে হিসহিস ফণা তোলে সন্দেহ। প্রেম মুহূর্তে প্রদাহ। সেনসেক্স পতনের মতো ওলটপালট হিসেব। ছোটবেলার টিকিট কেটে ফিরতে চাওয়া ভিন্ন, জীবন গতিহীন। অতীত তত দিনে আরও বিষাক্ত। জীবন খাদের কিনারে। ঠিক তখনই আবির্ভাব মৃত্যুঞ্জয় করের।
সে আবির্ভাব কি শুধুই মৃত্যুর উপভোগ্যতা প্রশিক্ষণে? উত্তর লুকিয়ে পর্দায়।
দৃশ্যের আলো-আঁধারিতে ফের জীবনের ঝোড়ো ইনিংস। গ্যালারিতে প্রশ্নের ওভার বাউন্ডারি। এ শহর কি শুধুই ফেসবুক, ইনস্টা, রিলসে ঘেরা? মাঝরাতে ডুকরে ওঠা এমএমএস-আতঙ্ক? ভিউজ়ের এগিয়ে যাওয়া, পিছিয়ে পড়া? প্রেম কি শুধুই শরীরের কাটাকুটি? সমস্ত প্রশ্নের বিপরীতে ভেসে থাকে দিনান্তের মায়া। এক আকাশ নীল রং মাথায় নিয়ে জোয়ারের জলে ভেসে চলে মৃত্যুঞ্জয়, পূর্ণা।
শরীরে শরীর ছুঁয়ে বাথটবে প্রেমের পৃথিবী ভ্রমণ। বুকে বুক আগলে ভালবাসার চিরন্তন গুনগুন। ছবির শেষ দৃশ্যে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ার মতোই সুন্দর।
ছবি জুড়ে মাটির তাল থেকে ধীরে ধীরে মৃন্ময়ী হয়েছেন কৌশানী। অসুস্থ পূর্ণাকে নার্সিংহোমে দেখতে যাওয়ার দৃশ্যে ‘পেট কাটা ষ’ বিশ্বনাথের মাসল অ্যাক্টিং ঝিনুক থেকে মুক্তো খুঁজে পাওয়ার মত অপরূপ। সন্দীপ্তা পরিসর মতো চেষ্টা করেছেন। ভাল লাগে অরিজিতাকে। ছবি জুড়ে সৃজিতীয় স্ট্রিট স্মার্টনেস, তুখোড় সংলাপ, অনবদ্য গান। যদিও ছবির টুইস্ট ম্যাড়ম্যাড়ে। আগে থেকে আন্দাজ করা যায়, গল্প কোন খাতে বইবে।
প্রায় বাড়ির কাছাকছি চলে এসেছি। বৃষ্টিও ঝোড়ো থেকে ঝিরিঝিরি। কানে ভাসে হল থেকে বেরিয়ে আসা দুই জ়েন জি’র সংলাপ— “আমরা কি বডি কাউন্ট আর রাইট- লেফট সোয়াইপে আটকে থাকব? মৃত্যুঞ্জয়-পূর্ণার মতো হাড়ে-মজ্জায় ভালবাসতে শিখব না?”