• ‘আবার চাকরি জুটলেও ফিরবে কি হৃতসম্মান’? প্রশ্ন শিক্ষিকার
    এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর

    কোনও পরীক্ষাতেই দ্বিতীয় হননি। মাধ্যমিক থেকে এমএসসি সবেতেই ফার্স্ট ক্লাস। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমবার বসেন। প্রথমবারেই উত্তীর্ণ। তখন তিনি পিএইচডি করছিলেন। কাউন্সেলিংয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ব্যানার্জীডাঙা হাই স্কুলটি বেছে নেন। ২০১৯ সালে সেখানেই নবম-দশমে গণিতের শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন আতেকা বানু।

    এ হেন আতেকার মন্তব্য, ‘এখনও আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমার যা যোগ্যতা আছে, চাকরির পরীক্ষা হলে আমি সফল হয়ে ফের কোথাও না কোথাও চাকরি জুটিয়ে নিতে পারব। কিন্তু সমাজে আমার যে সম্মানহানি হলো, তা কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন! লড়াইটা এ কারণেই। আমরা আমাদের হকের চাকরি দাবি করছি। স্কুল সার্ভিস কমিশন প্রমাণ করে দিক, আমি কোথাও কোনও অসদুপায় অবলম্বন করে চাকরি পেয়েছি।’

    স্কুলে খুব জনপ্রিয় আতেকা। আচার–ব্যবহারে একজন শিক্ষিকা হিসেবে যেমন হওয়া উচিত তার চেয়েও কিছুটা বেশি বলা যায় বলে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের দাবি। তিনি সুবক্তা। চাকরি হারিয়ে পথে নেমেছেন অন্য চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকাদের সঙ্গে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিলের পর দিন থেকেই মেদিনীপুরের প্রতিটিদিন আন্দোলনে থেকেছেন। বাড়িতে আড়াই বছরের কন্যাসন্তান।

    তাকে স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের কাছে রেখেই প্রতিদিন আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন হকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। শুক্রবারও কলকাতায় গিয়েছিলেন এসএসসি অফিস অভিযানে। আতেকার স্বামী মহম্মদ আজিজ পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার নাড়াজোল রাজ কলেজের কেমিস্ট্রির শিক্ষক। যোগ্যদের চাকরি ফেরতের দাবিতে স্ত্রী প্রতিদিন আন্দোলনে চলে যাওয়ায় কলেজ ছুটি নিয়ে কন্যাসন্তানকে সামলাচ্ছেন আতেকার স্বামী।

    আতেকা বলেন, ‘আচ্ছা বলুন তো, আমরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কেন আমাদের চাকরি গেল? একটা অপদার্থ সরকারের জন্য অযোগ্যদের সঙ্গে চাকরি হারাতে হলো যোগ্যদেরও। সরকার এবং তাঁর পারিষদদের দুর্নীতির কারণে আজ আমাদের এই অবস্থা। যাঁদের স্কুলে থাকার কথা, তাঁদেরকে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হচ্ছে। চাকরি চাইতে গিয়ে পুলিশের লাথি, লাঠি খেতে হচ্ছে। এই হল শিক্ষা!’

    তিনি আরও বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ফের চাকরির পরীক্ষা হলে আমি সফল হবই। আমার যা যোগ্যতা আছে কোথাও না কোথাও আমি একটা চাকরি জুটিয়ে নেব। কিন্তু বাকি সবার কী হবে!’ তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া আমরা আবার পরীক্ষা দেব কেন? কতবার আমাদের যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হবে? স্কুল সার্ভিস কমিশন ওএমআর শিটের মিরর কপি প্রকাশ করে দেখাক। প্রমাণ করুক আমি অযোগ্য।’

    আতেকার স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘আতেকা শিক্ষক হিসেবে খুব ভালো। আমাদের স্কুলের ৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন ২০১৬ সালের প্যানেলের। দু’জন শিক্ষাকর্মী। আরও একজন শিক্ষক ছিলেন ওই সালের। তিনি কয়েক মাস আগে কলেজে চাকরি পেয়ে চলে গেছেন। আতেকাকে নিয়ে আমাদের সবক’টি শিক্ষক-শিক্ষিকাই খুব ভালো। জানি না কী হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)