• আম-কলায় অরুচি, মন মজেছে চিপস-বিস্কুটে, বানরের উৎপাতে অতিষ্ঠ লাটাগুড়ি
    এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, লাটাগুড়ি: জঙ্গলের একঘেঁয়ে খাবার আর ভালো লাগছে না! চিপস–বিস্কুট এখন বেশি পছন্দ তাদের। বন ছেড়ে ক্রান্তি ফাড়ির আওতাধীন লাটাগুড়ির লোকালয়ে এসে বাড়িঘর বা দোকানে হানা দিচ্ছে বানরের দল। খাদ্যাভাসের পাশাপাশি রুচিতেও পরিবর্তন এসেছে তাদের। কখনও বানরদের দিকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোড়া হচ্ছে।

    সমস্যা মেটাতে বিকল্প পথে হেঁটেছেন লাটাগুড়ির ব্যবসায়ী মহল। বানরের হানা ঠেকাতে দোকানের চারপাশ নাইলনের নেট দিয়ে ঘিরে ফেলার ব্যবস্থা করেছে তারাে। নেট ব্যবহার করে বানরের হানা অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন দোকান মালিকরা।

    লাটাগুড়ির ব্যবসায়ী সংগঠনের অমিত দে বলেন, ‘বন্যপ্রাণীর মাঝেই আমাদের বসবাস। তবে দোকানে বানরের আনাগোনা িদন দিন বেড়েই চলছিল। সকলের সমস্যার কথা ভেবে বাধ্য হয়েই নেট দিয়ে দোকান ঘেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে দোকানগুলো কিছুটা রক্ষা পেলেও বানরের হানায় গৃহস্থেরা অতিষ্ঠ।

    লোকালয়ে আসা বানরের দলকে আদৌ জঙ্গলমুখী করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় বন দপ্তর। গোরুমারা ও লাটাগুড়ি জঙ্গল ঘেঁষা লাটাগুড়ির লোকালয়ে বানরের আসা–যাওয়া নতুন নয়। তবে সম্প্রতি তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন চিন্তায় ফেলেছে এলাকার লোকজনকে।

    লাটাগুড়ি বাজার, স্টেশনপাড়া অথবা মহালক্ষ্মীপাড়া–সহ গোটা লাটাগুড়িজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। কখনও দোকানে রাখা বিস্কুট–চিপসের প্যাকেট, কখনও আবার দোকানে সাজিয়ে রাখা ফল নিয়েও চম্পট দিচ্ছে তারা। তাই দিন দুপুরে বানরের এমন লুটপাট থেকে বাঁচতে অধিকাংশ দোকানদাররা নেট ব্যবহার করছেন।

    লাটাগুড়ি বাজারের এক বিক্রেতা দেবা চন্দের কথায়, ‘বানরের আনাগোনা লাটাগুড়িতে লেগেই থাকে। বর্তমানে খাদ্য সঙ্কটে তারাও খাবারের খোঁজে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে। ইদানীং দলবল নিয়ে মাঝেমধ্যেই দোকানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিস্কুট– চিপসের প্যাকেট তুলে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে৷’ তিনি জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে বানরের হানা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে দোকানের চারপাশ নেট দিয়ে ঘিরে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।

    লাটাগুড়ির বাসিন্দা প্রদীপ সরকারের কথায়, ‘দিন কয়েক আগে বাড়ির রান্নাঘরে বানরের দল হানা দিয়ে অনেক সরঞ্জাম নষ্ট করেছে। তাঁর দাবি, বনদপ্তর সমস্যার সুরাহা করুক। বিভিন্ন রিসর্টগুলোয় ফেলে দেওয়া খাবারের টানে বানরের দল ভিড় করত। এখন রিসর্ট ছেড়ে বাড়ি ও দোকানে তারা হানা দিচ্ছে।

    লাটাগুড়ির বাসিন্দা পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদার বলেন, ‘জঙ্গলের ধারে এক শ্রেণির মানুষ উদ্বৃত্ত খাবার ফেলে দিয়ে চলে যান। সেই খাবারের খোঁজে বানরের দল লোকালয়ে চলে আসছে। জঙ্গলের ভিতরে তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য পর্যাপ্ত ফলের গাছ লাগানো প্রয়োজন।’ গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের এডিএফও রাজীব দে বলেন, ‘বানরের দিকে খাবার ছুড়ে দেওয়ার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেড়েছে। তাই খাদ্যাভাসের পরিবর্তন। এত সংখ্যক বানরকে খাঁচাবন্দি করে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।’

  • Link to this news (এই সময়)