• ‘পেট্রল নিয়ে আয়, জ্বালিয়ে দেব...’, কেন বলেছিলেন? মুখ খুললেন সেই চাকরিহারা
    এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • ‘পেট্রল নিয়ে আয় জ্বালিয়ে দেব...’। ফেসবুক জুড়ে রিপ্লেতে চলছে এই লাইনটি। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে কসবা DI অফিসের সামনে বিক্ষোভরত চাকরিহারাদের একজনের মুখে এমন ‘আগ্রাসী’ মন্তব্য শুনে ভ্রু কুঁচকেছেন অনেকেই। জানা গিয়েছে, ওই যুবকের নাম প্রতাপ গুহ রায়চৌধুরী। পুলিশের চোখে তিনি ‘অভিযুক্ত’। তিনি সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, পুলিশ কর্মীদের হেনস্থায় প্ররোচনা দিয়েছেন। BJP নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলছেন, তিনি ২০২১ সালে ছিলেন তৃণমূলপন্থী। আবার দেবাংশু ভট্টাচার্যের দাবি, ২০২২-এ এই যুবকই বামেদের ফেরানোর জন্য জোরালো সওয়াল করেন। রাজনৈতিক এই দড়ি টানাটানির মাঝে পড়ে প্রতাপ বলছেন, ‘আমি বৈধ ভাবে চাকরি পাওয়া যোগ্য শিক্ষক। রাতারাতি চাকরিহারা হয়ে বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত।’

    রাতারাতি চাকরি হারিয়ে দিশেহারা পুলিশের ফেসবুক দেওয়ালে ‘চিহ্নিত’ প্রতাপ গুহ রায়চৌধুরী। কলকাতা পুলিশ বলছে, এই যুবককে ভাইরাল ভিডিয়ো ক্লিপে ‘জায়গাটা পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দাও’ বলতে শোনা গিয়েছে। সত্যিই কি তিনি উস্কানিমূলক আচরণ করেছেন? প্ররোচনা দিয়েছেন বাকি বিক্ষোভকারী চাকরিহারাদের? এই সময় অনলাইনে নেপথ্যের কাহিনি জানালেন প্রতাপ। তাঁর কথায়, ‘পুলিশ যে ভাবে আমাদের মারছিল, আমরা সকলে বলতে চেয়েছিলাম, এ ভাবে না মেরে আমাদের গুলি করে দিন। কোর্টের অর্ডার নিয়ে এসে ফাঁসি দিয়ে দিন। অথবা পেট্রল নিয়ে আয় আমরা নিজেরাই নিজেদের জ্বালিয়ে দিই। এই কথাটির বাকি অংশটুকু কেটে এইটুকু বারবার চালানো হচ্ছে।’ তাঁর দাবি, ‘সরকারি সম্পত্তি জ্বালানো কিংবা নষ্ট করার কথা আমরা কখনওই বলিনি।’

    গোসাবা এনসি হাইস্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক প্রতাপ গুহ রায়চৌধুরী। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি চাকরিহারা। সোনারপুরের বাসিন্দা প্রতাপের বাড়িতে রয়েছে পৌনে তিন বছরের সন্তান। পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে। তাঁর স্ত্রী, সন্তান, মা এবং শ্বশুর-শাশুড়ি সকলের অন্ন জোগাত প্রতাপের চাকরি। সর্বস্ব খুইয়ে প্রতাপ বলছেন, ‘আমাদের তো সব গিয়েছে। সামাজিক সম্মান ধুলোয় লুটিয়েছে। এত বড় সাজা দেওয়া হলো ভারতের মতো গণতান্ত্রিক একটা দেশে। আত্মহনন ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই আমাদের কাছে। সেইটাই বলেছিলাম সে দিন। পুলিশের মার না খেয়ে পেট্রল গায়ে ঢেলে নিজেরাই নিজেদের জ্বালিয়ে দিই। অন্য ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে সেই বক্তব্য। পুলিশ এবং অন্যান্য দলের তরফ থেকে ওই অংশ কেটে ভিডিয়ো ক্লিপ দেখানো হচ্ছে। সরকারি কর্মীদের হেনস্থা করার কোনও অভিপ্রায় নেই।’

    কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারী চাকরিহারাদের প্ররোচনার কারণেই ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করতে হয়েছে তাদের। এর জবাবে প্রতাপ বলেন, ‘যাদের বিনা দোষে চাকরি চলে গেল তাঁরা চুপচাপ বসে থাকবে? হ্যাঁ, আমরা DI অফিসে তালা মারতে গিয়েছিলাম। ধস্তাধস্তি হয়, কারণ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। তবে কোনও পুলিশ কর্মীর সঙ্গে আমাদের ধস্তাধস্তি হয়নি। গেটে বসে গিয়েছিলাম আমরা, কারণ ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। ব্যারিকেড সরিয়ে ঢুকতে গিয়েছি তাই নিজেদের মধ্যেই ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যে ভাবে মারছিল তাতে মনে হয়েছিল পেট্রল গায়ে ঢেলে নিজেদের জ্বালিয়ে দিই। ফাঁসিকাঠে ঝুলে যাওয়া ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও রাস্তা নেই।’

    যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের সদস্য হিসেবে সেই দিন কসবা DI অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন সোনারপুরের চাকরিহারা এই শিক্ষক। তবে তৃণমূল বলছে তিনি CPIM পন্থী, আবার BJP-র দাবি, তিনি তৃণমূল। প্রতাপ বলেন, ‘বিপদের সময়ে মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে এমন হাসিঠাট্টা করা যায় তা কল্পনারও অতীত। এমনটা না করে রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে এঁরা তো আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারতেন।’

    তথ্য সহায়তায়: তুহিন চক্রবর্তী

  • Link to this news (এই সময়)