‘পুশআপ’, ‘পুলআপ’-এ কেরামতি দেখানো জেন-জ়ির কাছে বেশ জনপ্রিয়। নতুন প্রজন্ম ‘ফিটনেস ফ্রিক’। কদর বেড়েছে জিমেরও। কিন্তু ৮৫ বছরের শোভারানি বন্দ্যোপাধ্যায় কোনওদিন জিমমুখো হননি। কিন্তু বিপদের মুহূর্তে কুয়োর মধ্যে থাকা দড়ি ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলে রইলেন। পরে দমকল বাহিনী এসে তাঁকে উদ্ধার করে। কুয়ো থেকে বেরিয়েই তাঁর আবদার, ‘একটু চা খাব’। এ দিকে ততক্ষণে বুক শুকিয়ে গিয়েছে পরিজনদের। কিন্তু টনটনে গলায় শোভারানির আবদার শুনে হাসি ফিরল তাঁদের ঠোঁটেও।
শোভারানির বাড়ি হুগলির পাণ্ডুয়ার বৈঁচীগ্রাম দক্ষিণপাড়ায়। বাড়িতে একাই থাকেন তিনি। ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন কলকাতা। ৮৫ বছরের এই তরতাজা মানুষটির দেখভাল করেন পাশের বাড়ির বর্ণালী বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার দুপুরে বর্ণালীই তাঁকে খাইয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি শোভারানির বাড়িতে গিয়ে তাঁকে দেখতে পাননি। কোথায় যেতে পারেন এই প্রবীণা? চিন্তায় কালঘাম ছুটে যায় তাঁর। হঠাৎ তাঁর চোখ যায় বাড়ির সামনে থাকা কুয়োয়। তিনি দেখতে পান, কুয়োর দড়ি ধরে ঝুলে রয়েছেন শোভারানি।
এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে পাড়ার লোকজনদের ডাকেন বর্ণালী। তাঁরা শতচেষ্টা করেও এই প্রবীণাকে উদ্ধার করতে পারেননি। এর পর তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় বৈঁচী পুলিশ ফাঁড়িতে। পাণ্ডুয়া থেকে দমকল কর্মীরা মই নিয়ে যান। প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় লাগে এই সমস্ত কিছু আয়োজনে। জানা গিয়েছে, এই গোটা সময় কুয়োর দড়ি ধরে ঝুলে ছিলেন প্রবীণা। এর পর দমকলের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যান।
যদিও শোভারানি দিব্যি সুস্থ ছিলেন। তিনি বেডে শুয়ে সিস্টারদের থেকে চা খেতে চান। এই আবদারে হাসি সিস্টারদের মুখেও। রাখা হয় সেই আবদারও। ঘটনার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন পাণ্ডুয়ার বিধায়ক রত্না দে নাগ। তিনি শোভারানিকে উদ্ধারের জন্য দমকল দপ্তর, পুলিশ এবং বিডিও-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বর্ণালী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দিদিমাকে ভাত খাইয়ে দিয়ে আমি নিজে খেতে গিয়েছিলাম। আমার খেয়ে আসতে যতটুকু সময়, তার মধ্যেই এই কাণ্ড। ভয়ে প্রাণটাই বেরিয়ে গিয়েছিল।’ এ দিকে মায়ের কুয়োয় পড়ে যাওয়ার খবর শুনে তড়িঘড়ি কলকাতা থেকে চলে এসেছিলেন তাঁর ছেলে সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘মায়ের দেখাশোনার জন্য লোক রয়েছে। গ্রামের ছেলেরাই আমাকে জানাল মা কুয়োতে পড়ে গিয়েছে। এখানে এসে মাকে সুস্থ স্বস্তি ফিরেছে।’ পুলিশ জানিয়েছে, এই প্রবীণা জল তোলার জন্য কুয়োর কাছে গিয়েছিলেন। সেই সময়েই পা হড়কে তিনি নীচে পড়ে যান।