‘বিকাশবাবুর কথাতেই পরিষ্কার, উনি চান না যোগ্যরা চাকরিতে বহাল থাকুন’
বর্তমান | ১৩ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: চাকরিহারাদের কাজে ফেরালে আদালত অবমাননার মামলা করার কথা বলেছেন আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বীরভূমের চাকরিহারা শিক্ষকরা। চাকরিহারা শিক্ষকদের বক্তব্য, ‘যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা না করে উনি প্রথম থেকেই চাইছিলেন প্যানেল বাতিল হোক। তিনি কি চাইছেন না যে, ঠিকঠাকভাবে বাছাই হয়ে যোগ্যরা চাকরিতে বহাল থাকুন? তাই কি এমন সব কথা বলছেন।’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। স্কুলে স্কুলে হাহাকার দেখা দিয়েছে। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার মধ্যে পড়েছেন অভিভাবকরা। এই অবস্থায় চাকরিহারাদের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পডুয়াদের স্বার্থে বেশ কিছু চাকরিহারা শিক্ষক স্কুলে যাওয়া আসাও করছেন।
চাকরিহারা রাজগ্রাম মহামায়া হাইস্কুলের টিআইসি বিশ্বজিৎ গোস্বামী বলেন, বিকাশবাবু কোনওদিনই চাননি যোগ্য–অযোগ্য আলাদা হোক। উনি প্রথম থেকেই চাইছিলেন পুরো প্যানেল বাতিল হোক। এই মন্তব্য তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চিন্তাভাবনা হতে পারে। যে অভিযোগকারীর হয়ে তিনি মামলা করেছিলেন, সেখানে বলা হয়েছিল, অযোগ্যদের বাদ দিয়ে তালিকায় যোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি উনি সেখান থেকে পিছু হটে গেলেন। মামলার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন।
কুসুম্বা হাইস্কুলের চাকরিহারা শিক্ষক প্রসেনজিৎ মণ্ডল বলেন, এতবছর পড়াশোনা করে পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, বারবার ভেরিফেকেশন করে একটা চাকরি পেয়েছিলাম। অনেক যোগ্য শিক্ষক চাকরি পেয়েছেন, সেটা বিকাশবাবু ভালো করেই জানেন। তা সত্ত্বেও উনি এসব কথা কেন বলছেন, আমরা জানি না। পাশাপাশি সরকারও যদি মিরর ইমেজগুলি ঠিকঠাক করে দিত, তাহলে এই সমস্যা হতো না। একদিকে বিকাশবাবু হুঙ্কার দিচ্ছেন, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, স্কুলে যাও। যদিও শিক্ষাদপ্তর লিখিত কোনও নির্দেশিকা দেয়নি। এই যাঁতাকলে পড়ে আমাদের দিশাহারা অবস্থা। এখন স্কুল যাওয়া উচিত না কি উচিত নয়, ভেবে পাচ্ছি না।
এদিকে অভিভাবক শ্রাবণী দাস বলেন, বিকাশবাবুর এই মন্তব্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট প্যানেল বাতিল করেছে, ফলে এই ২৬ হাজারের কারও চাকরি নেই। এখন নতুন করে এই কথা বলার কোনও জায়গা নেই। চাকরিহারারা স্কুলে আসবেন, না কী আসবেন না— সেটা সরকারকেই লিখিতভাবে জানাতে হবে।
আরেক অভিভাবক বিকাশ দাস বলেন, আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ সরকারি স্কুলের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া শিক্ষা আগে, রাজনীতি পরে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকের কাছে রাজনীতিটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, ব্রাত্য হয়ে পড়েছে শিক্ষা। এই রায়ে স্কুলগুলির কী করুণ দশা, তা তাঁরা একবার ঘুরে দেখে যান। যোগ্য শিক্ষকদের বহাল রাখার আবেদন জানাই।