সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: এবার নবদ্বীপের সমবায় ব্যাঙ্কে আর্থিক তছরুপ! গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম প্রবীর ঘোষ ওরফে শ্যাম। আর্থিক তছরুপের অভিযোগে শুক্রবার রাতে শ্যাম ঘোষকে গ্রেপ্তার করে নবদ্বীপ থানার পুলিস। শনিবার ধৃতকে নবদ্বীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুরে নিদয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। শুক্রবার দুপুরে তাঁরা বন্ধ ব্যাঙ্কের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান। শেষে কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর ও পুলিসের উপস্থিতিতে ব্যাঙ্কটি সিল করে দেওয়া হয়। গ্রাহকদের দাবি, ওই ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া গোষ্ঠীর লোন পরিশোধ করা হয়েছে। তবুও তাঁরা নতুন করে লোন পাচ্ছেন না। এমনকী, গত কয়েক মাস ধরে ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার টাকা পেতেও হয়রান হতে হচ্ছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, নগদ টাকা ও সোনা মিলিয়ে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা তছরুপ হয়েছে।
নবদ্বীপ ব্লকের কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর রমেন সরকার বলেন, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা ওই ব্যাঙ্ক পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তখন হিসাবে ৩৭ লক্ষ টাকার গরমিল ধরা পড়ে। তার মধ্যে ১৪ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ম্যানেজারের ছেলে প্রবীর ঘোষ তছরুপ করেছে বলে স্বীকার করে। সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে দিয়েছিল সে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাবা ও ছেলে দু’জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই ওই বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি। এই ঘটনার সঙ্গে ব্যাঙ্কের বোর্ড জড়িত আছে কি না, তার তদন্ত হবে। সেই সময় চুরি ধরার পরায় প্রবীর ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়। এখন অভিযুক্তরা ব্যাঙ্কের সফটওয়্যার অকেজো করে রেখেছে। আপাতত লক্ষ্য, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অ্যাকাউন্টগুলি দ্রুত সচল করা।
স্থানীয় কাউন্সিলার ঝন্টুলাল দাস বলেন, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই ব্যাঙ্কে পরিদর্শন হয়েছিল। তখন ম্যানেজারের ছেলে কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টরের কাছে লিখিত জমা দেয়, ওই টাকা দু’বছরের মধ্যে ফেরত দেবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সময় কেন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হল না? আমরা বলেছি, ভাতার টাকা আসে এরকম অ্যাকাউন্টগুলিকে নদীয়া ডিস্ট্রিক্ট সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দ্রুত ট্রান্সফার করতে হবে। ওই ব্যাঙ্কে যাঁদের গচ্ছিত টাকা ও সার্টিফিকেট আছে, সেগুলি শীঘ্রই তাঁদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। ওই রাতে যেসব গ্রাহক ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাঁদের সামনেই এই কথা হয়।
ধৃত প্রবীর ঘোষ ওরফে শ্যাম বলে, আমি ব্যাঙ্ক থেকে কোনও টাকা-পয়সা নিইনি বা তছরুপ করিনি। আমি বাবার কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম। বাবা কোথা থেকে টাকা পেয়েছেন, বলতে পারব না। তবে ২০২২ সালে ওই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। আমি এই টাকা ফেরত দিতে রাজি আছি।