ধুলিয়ানে অশান্তি রুখতে পুলিস ও বিএসএফের গুলি, গ্রেপ্তার ১১৮
বর্তমান | ১৩ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: একের পর এক গুজব ছড়াচ্ছে এলাকায়। সেই গুজব থেকে জঙ্গিপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় ছড়াচ্ছে অশান্তি। শান্তি রাখার বার্তা দিচ্ছেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। তারপরেও চলছে বিশৃঙ্খলা। অশান্তি সামাল দিতে নাজেহাল পুলিস প্রশাসন। গুজব ঠেকাতে আগে থেকেই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরেও অশান্তি ঠেকানো যাচ্ছে না। শুক্রবারের পর, শনিবার সকাল থেকে সামশেরগঞ্জ, সূতি ও রঘুনাথগঞ্জ ছিল থমথমে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিস। তারপরেও বেলা গড়াতেই ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। শহর সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্রামেও দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিস ও বিএসএফ যৌথভাবে কড়া পদক্ষেপ নেয়।
কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরী ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুলিস-প্রশাসনকে নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার সূতির সাজুর মোড় এলাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিস গুলি চালায়। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে শনিবার ধুলিয়ানের ২১নম্বর ওয়ার্ডে গুলি চালায় বিএসএফ। তাতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। গুলি চালানোর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ধুলিয়ান শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে দুষ্কৃতীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। জাফরাবাদ এলাকায় দু’জনকে কুপিয়ে খুন করে। ধুলিয়ান শহরের কয়েকজন মহিলা বলেন, আমাদের বাড়ি লাগোয়া পরপর দোকান রয়েছে। কারও মিষ্টির দোকান, কারও মুদিখানার দোকান। সমস্ত জায়গাতে লুটপাট চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আমরা আতঙ্কিত।
জানা গিয়েছে, এদিন সকাল থেকে ধুলিয়ান শহর সংলগ্ন এলাকায় দোকানপাটে লুটপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। শপিংমল থেকে অবাধে জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। বেশ কিছু বাড়িতে ও ধর্মীয় স্থানে তারা তাণ্ডব চালায়। স্থানীয় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। তবে রাজ্য পুলিসের শীর্ষ কর্তারা কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, বিকেলের দিকে ধুলিয়ানের বেশ কিছু জায়গায় ফের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সামশেরগঞ্জের হিজলতলায় বিক্ষোভ দেখানোর নামে অনেকেই বিশৃঙ্খলা পাকানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে বিএসএফ গুলি চালায়। তাতে এক যুবক জখম হন। শনিবার সন্ধ্যায় জঙ্গিপুরে এসে পৌঁছন রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমার সহ শীর্ষ আধিকারিকরা। তিনি জানান, অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ১১৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষকে শান্ত থাকার আবেদন জানান। তিনি বলেছেন, সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনও অধার্মিক আচরণ করবেন না। কিছু দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। প্রসঙ্গত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে জঙ্গিপুর মহকুমায় একাধিক বিক্ষোভ মিছিল থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে আইনের বিরুদ্ধে অনেকে উত্তেজিত, সেটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই যা উত্তর চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে। আমরা এই আইনকে কখনোই সমর্থন করি না। এই আইন আমাদের রাজ্যে লাগুও হবে না।