শিক্ষক সঙ্কটকালে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে চায় সংগঠন, নারাজ পর্ষদ
বর্তমান | ১৩ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২৬ হাজার শিক্ষক চাকরিহারা। আর এই পরিস্থিতিতে ফের উঠে এল সেই বিতর্কিত প্রশ্ন— শিক্ষক সংগঠনগুলি কি স্কুলের পরীক্ষা বা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টের প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারে? রাজ্যের সবচেয়ে পুরনো প্রধান শিক্ষক সংগঠন এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রশ্নপত্র তৈরির আবেদন জানিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে চিঠি লিখেছে। তার ফলেই ফের আলোচনায় সেই বিতর্ক। যদিও, পর্ষদ এই দাবি মেনে নিতে রাজি নয়।
ওয়েস্ট বেঙ্গল হেডমাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশন শনিবারই পর্ষদে এই চিঠি পাঠিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলি নানা বিষয়ের প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারছে না। সামনেই দ্বিতীয় সামেটিভ মূল্যায়ন। তারপরে রয়েছে তৃতীয় সামেটিভ, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট। এসব পরীক্ষার প্রশ্ন পর্ষদের নির্দেশে স্কুলের শিক্ষকরা তৈরি করে থাকেন। যিনি যে বিষয়ের শিক্ষক, তাঁকে সেই প্রশ্ন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না বলেই দাবি এই সংগঠনের।
বাম আমল থেকেই শিক্ষক সংগঠনগুলি প্রশ্নপত্র, টেস্ট পেপার প্রভৃতি তৈরি করে থাকে। নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে সংগঠনগুলি থেকে তা কিনে নেয় স্কুলগুলি। বাম আমলে সিপিএমপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ এই বিষয়ে ‘মার্কেট লিডার’ ছিল। তবে, তৃণমূল এসে এই ব্যবস্থা বন্ধ করে। যদিও শিক্ষাদপ্তরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেশ কিছু তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনও এই ‘ব্যবসা’য় নেমেছিল। তবে, আপাতত তা বন্ধ। তাও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু এলাকায় এমন অভিযোগ যে ওঠে না, তা নয়। যদিও, কেন্দ্রীয়ভাবে একটি জায়গা থেকে প্রশ্নপত্র আসায় কিছু সুবিধাও আছে বলে মত শিক্ষকদের। ভালো শিক্ষকদের দিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হলে সাধারণ পড়ুয়ারাই উপকৃত হয়। অনেক সময় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাবে অন্য শিক্ষককে দিয়ে প্রশ্ন তৈরি করতে বাধ্য হয় স্কুল। এক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা এড়ানো যায়। যদিও, সংগঠনগুলির এই যুক্তি মানতে নারাজ পর্ষদ। সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘সংগঠনগুলি পেশাগত স্বার্থে তৈরি হয়েছে। প্রশ্নপত্র তৈরির এক্তিয়ার তাদের নেই। ব্যবসায়িক মুনাফার জন্য আজ প্রধান শিক্ষক সংগঠন, কাল শিক্ষক সংগঠন প্রশ্ন বিলি করার দাবি তুললে তা হবে ছাত্রস্বার্থ বিরোধী এবং সুবিধাবাদী প্রস্তাব। সংগঠনগুলি নিজস্ব অধিকারে চলে। তবে নিজ নিজ স্কুলে সদস্যদের অস্তিত্ব তাঁদের পদ অনুযায়ী, সংগঠনগতভাবে নয়।’