এই সময়: আদালতের নির্দেশ মেনে কবে হবে নতুন নিয়োগ, ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পরে এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর এখনও নেই রাজ্য সরকার কিংবা স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) কাছে। কোনও সময়সীমা না বাঁধলেও একসঙ্গে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে গেলে, স্কুলে স্কুলে যে সমস্যা তৈরি হবে, তা আন্দাজ করে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু কমিশন এখনও স্পষ্ট করতে পারেনি যে, কবে সেই প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। কারণ, নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষার সম্ভাব্য দিনক্ষণ নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনও আলোচনাই হয়নি।
সূত্রের খবর, রায় বেরোনোর দিন–ই স্কুলশিক্ষা দপ্তর এসএসসি’কে একটি চিঠি পাঠিয়ে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলে। এরপর ১০ দিন কেটে গেলেও বিষয়টির আর কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে চাকরিহারাদের অভিযোগ।
এ সবের মধ্যেই আবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে যে মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন দায়ের করেছে, তাতে দাবি করা হয়েছে, নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত এই চাকরিহারা শিক্ষকদের কাজ করতে দেওয়া হোক। না হলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। চলতি শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ আবার ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত।
আইনজ্ঞদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, তা হলে এটা কি শুধুই সময় কিনতে চাওয়ার কৌশল? উল্লেখ্য, বাম জমানায় এসএসসির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতেও অন্তত ১২ থেকে ১৫ মাস সময় লাগত। ২০১১ সালের পরে অবশ্য সেই ছবি পাল্টে গিয়েছে। গত ১৪ বছরে মাত্র দু’বার এসএসসির পরীক্ষা হয়েছে।
আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তর কথায়, ‘এসএসসি রায়ের মডিফিকেশন চেয়ে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা জমা দেওয়ার কথা বলে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারত। যেটা তথাকথিত যোগ্য প্রার্থীরাও দাবি করছেন। তা না করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে।’ তাঁর সংযোজন, ‘চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে এখনও সাড়ে আট মাস সময় রয়েছে। তার মধ্যে আবার একমাসের বেশি সময় ধরে পুজো ও উৎসব চলবে। এসএসসি সেই সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতেই পারবে না। আবার শিক্ষাবর্ষ মিটতে না মিটতেই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের দামামাও বেজে যাবে।’
যদিও স্কুলশিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা সুদীপ্তর দাবিকে নস্যাৎ করে দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘এসএসসি–র বদলে পর্ষদের সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হওয়া একেবারে ‘মাস্টার স্ট্রোক’। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, চাকরিহারাদের পুনর্বহালের পক্ষে এসএসসি–ই সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল। আইনজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়।’
এসএসসি সরাসরি আদালতে গেলে কী সমস্যা হতো?
বিকাশ ভবনের ব্যাখ্যা, ২৬ হাজার শিক্ষককে চাকরি দিয়েছিল এসএসসি। তারা যদি শুরুতেই রায় বিবেচনার জন্য আদালতে যেত তাহলে তা সরাসরি খারিজের সম্ভাবনা বেশি ছিল। সেখানে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পৌনে এক কোটি পড়ুয়ার ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করায় সেই যুক্তি শীর্ষ আদালতের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।
যদিও সর্বোচ্চ আদালত ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করলেও নতুন নিয়োগ কবে শেষ করতে হবে, সে ব্যাপারে রায়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। আবার সুপ্রিম কোর্ট চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে পুরো প্যানেল খারিজ করলেও একগুচ্ছ মানবিক বিষয়েও নজর দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে পর্ষদ সুপ্রিম রায়কেই হাতিয়ার করে এগিয়ে এসেছে।
পর্ষদের এক কর্তা শনিবার বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত বিশেষ ভাবে সক্ষমদের চাকরি বাতিল করলেও তাঁদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা মাথায় রেখে নতুন নিয়োগ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বেতন দিতে নির্দেশ দিয়েছে। আবার যাঁরা অন্য সরকারি বা স্বশাসিত সংস্থার চাকরি ছেড়ে এসএসসি–র ২০১৬ সালের নিয়োগের ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন (টেন্টেড নন) তাঁরা পুরোনো সংস্থায় চাকরিতে ফেরার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরকম একাধিক মানবিক দিক রয়েছে। ফলে সেই বিষয়গুলি আমরা সামনে আনতে চাই।’
চাকরিহারা ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’র তরফে সঙ্গীতা সাহা বলেন, ‘রাজ্যে আট বছর ধরে কোনও নতুন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে সাড়ে ১৯ হাজার ‘যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী’র চাকরি গেলে স্কুলে পঠনপাঠন, পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়বে। তাই পর্ষদ দুটি শর্তের উল্লেখ করে নিজেদের স্বার্থেই এসএসসি–র আগে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে।’