• ‘নিজেদের ডেটা বেস’ থেকে কী ভাবে জবাব আরটিআইয়ের
    এই সময় | ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: বছর দেড়েক আগে দু’বার দু’টি আরটিআই–এর জবাবে ‘নিজেদের ডেটা বেস’ থেকেই চাকরিপ্রার্থীর ওএমআর ডেটা প্রকাশ করেছিল এসএসসি! অথচ সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলার সময়ে তারা আবার বলেছে, ২০১৬–এর বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে হওয়া নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর তো তারা নষ্ট করে ফেলেছে। মিরর ইমেজও তাদের কাছে নেই! এখন আবার সুপ্রিম–রায়ে তথাকথিত ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের দাবির মুখে এসএসসি বলছে— সিবিআইয়ের কাছ থেকে পাওয়া মিরর ইমেজই প্রকাশ করার ব্যাপারে তারা আইনি পরামর্শ নিচ্ছে!

    ওএমআর শিট ও তার মিরর ইমেজ নিয়ে এক এক সময়ে এসএসসি–র এই এক এক রকম বয়ান নিয়ে আগেই উষ্মা প্রকাশ করেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এখন আবার ‘যোগ্য–অযোগ্য’ বাছাইয়ে এসএসসি–র নতুন আশ্বাসে বিভ্রান্ত চাকরিহারা শিক্ষকদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, এসএসসি–র নিয়োগ দুর্নীতির মামলা চলাকালীনই অন্তত দু’বার চাকরিপ্রার্থীদের করা আরটিআই–এর জবাবে ‘নিজেদের ডেটা বেস’ থেকে ওএমআরের মিরর ইমেজ উদ্ধৃত করে নম্বর প্রকাশ করেছিল এসএসসি। একবার ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে, অন্যটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। যদি ওএমআর বা তার মিরর ইমেজ না–ই থাকে, তা হলে কী ভাবে নিজেদের ডেটা বেস থেকে এসএসসি দু’বার তা প্রকাশ করল?

    আদালতেও শুনানি চলাকালীন ওএমআর এবং মিরর ইমেজ নিয়ে এসএসসি–র নানা রকম অবস্থান বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়েছে বলে আইনজ্ঞদের একাংশের ধারণা। যার ফলস্বরূপ আলাদা করা যায়নি ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’–দের তালিকা, বাতিল হয়েছে পুরো প্যানেলই।

    সুপ্রিম–রায়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যদি এসএসসি–র কাছে ওএমআরের কোনও কপি না–ই থাকে তা হলে কী ভাবে দু’বার আরটিআই–এর জবাবে ‘নিজেদের ডেটা বেস’ থেকে এসএসসি সেই ওএমআর দিল? এসএসসি–র দাবি, ওই ওএমআর তাদের কাছে ছিল না। সিবিআই তদন্ত করতে গিয়ে ওএমআরের যে মিরর ইমেজ খুঁজে পেয়েছিল, তার ভিত্তিতেই আরটিআই–এর জবাব দিয়েছিল। বঞ্চিত এক চাকরিপ্রার্থী ২০২৩–এ আরটিআই করে জানতে চান, ওএমআরে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর কত ছিল।

    ২০২৪–এর ১৮ জানুয়ারি সালে এসএসসি তার জবাব দেয়। প্রকাশ করা হয় ওএমআরে প্রাপ্ত নম্বর ও অন্যান্য তথ্যও। তারা এটাও জানায়, এই তথ্য নিজেদের ডেটা বেস থেকে তারা দিয়েছে। আর এক চাকরিপ্রার্থীর ক্ষেত্রেও এসএসসি একই জবাব দিয়েছিল। শনিবার সুদীপ্তর প্রশ্ন, ‘যদি ওএমআরের কপি না–ই থাকে, তা হলে দু’বার নিজেদের ডেটা বেস থেকে তা প্রকাশ করা হলো কী ভাবে? আর যদি ওই ওএমআরের মিরর ইমেজ সিবিআই–এর থেকেই পাওয়া যায়, তা হলে এসএসসি তা লিখল না কেন?’ এসএসসি–র একটি সূত্রের দাবি, ‘এটা অসাবধানতাবশত ভুল হয়ে গিয়েছে।’ সুদীপ্তর পাল্টা প্রশ্ন, ‘দু’বার একই ভুল হয় কী করে?’

    চাকরিহারাদের অনেকেই এখন এসএসসি–র থেকে ওএমআর শিট অথবা মিরর ইমেজের কপি দাবি করছেন। শুক্রবার বিকাশ ভবনের বৈঠকেও সেই দাবি তোলা হয়। চাকরিহারাদের বক্তব্য, এসএসসি ওই বৈঠকেও বলেছে, তাদের ডেটাবেসে ওএমআর ও মিরর ইমেজ নেই। ২০২২ সালে সিবিআই গাজ়িয়াবাদে ওএমআর মূল্যায়নকারী সংস্থা ‘নাইসা’র প্রাক্তন আধিকারিক পঙ্কজ বনসলের বাড়ি থেকে তিনটি হার্ডডিস্ক উদ্ধার করে। সেখানে যে মিরর ইমেজ ছি‍ল, তারই একটি কপি এসএসসিকে দেওয়া হয়েছে।

    আইনজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, সিবিআই–এর দেওয়া মিরর ইমেজ থেকে এসএসসি আরটিআই–এর জবাব দিচ্ছে, অথচ আদালতের কাছে তারা কখনওই নিশ্চিত ভাবে বলেনি যে, ওই মিরর ইমেজ ২০১৬ সালের নিয়োগ–পরীক্ষার কি না। আদালতে বার বার সুযোগ পেয়েও এসএসসি কখনওই ওই ওএমআরকে মান্যতা দেয়নি, আবার বিরোধিতাও করেনি। ওই ওএমআর খতিয়ে দেখার পরে ৬,২৭৬ জন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকের নাম সিবিআই জানিয়েছিল, তার বাইরে আরও কোনও ‘অযোগ্য’ প্রার্থী আছে কি না, এসএসসি–র বিভ্রান্তিকর অবস্থানের জন্য আদালত তা নিয়ে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। এসএসসি এটাও নিশ্চিত করতে বলতে পারেনি, এই ৬,২৭৬ জনকে বাদ দিয়ে বাকিরা ‘যোগ্য’ কি না। শনিবার অবশ্য ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের প্রতিনিধি চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘আমরা জানি এসএসসি ওএমআর এবং তার মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করতে পারেনি। আমরা তা–ও এটা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি একটাই কারণে, যাতে আমাদের রিভিউ পিটিশনটা জোরদার হয়। আমরা স্পষ্ট করে আদালতকে দেখাতে পারি, কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য।’

    ওএমআর নিয়ে বার বার এসএসসি নানা বিভ্রান্তিকর অবস্থান নিয়েছে আদালতে। যেমন— কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার একেবারে শুরুর দিকে এসএসসি হলফনামা দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মার্কস জানিয়েছিল। কিন্তু আদালতকে তারা বলেনি যে, সেই ওএমআরগুলি তাদের কাছে নেই। তা হলে কীসের ভিত্তিতে হলফনামা দিয়ে ওই মার্কস জানিয়েছিল এসএসসি, তা পরিষ্কার হয়নি শীর্ষ আদালতেও। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ স্পষ্ট বলেছে, ‘এসএসসি ওএমআর শিটের স্ক্যানড কপি বা মিরর ইমেজ তাদের ইলেকট্রনিক রেকর্ডে না–রেখে তা নাইসার কাছে (ওএমআর পরীক্ষক সংস্থা) রাখতে দিয়েছিল, এটা অদ্ভুত ব্যাপার। ওএমআর শিটের স্ক্যানড কপি এসএসসি প্রথমে নিজেদের কাছে রেখেও পরে নষ্ট করে ফেলে— এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান থেকে মনে হচ্ছে, এটা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়ম ঢাকার চেষ্টা।’

  • Link to this news (এই সময়)