এই সময়: মুর্শিদাবাদ–সহ পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলার আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে দিল্লি। শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে। দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়। সামশেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ানে ঠিক কী চলছে, তা সুকান্তর কাছে জানতে চান শাহ।
বহুদিন ধরে এ রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, বাংলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রভাবিত এলাকাগুলিতে ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। ছড়িয়ে পড়েছে হিংসাত্মক আন্দোলনও। এই আবহে বিজেপি নতুন ভাবে বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর চাপ বাড়াতে তৎপর হয়েছেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা।
সূত্রের খবর, রাজ্যে সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনাগুলি নিয়ে অমিত শাহ রিপোর্ট চাইতে পারেন রাজ্য সরকারের কাছে। সুকান্ত যেমন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নালিশ ঠুকেছেন, তেমনই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে চিঠি লিখে এনআইএ তদন্ত দাবি করেছেন। চিঠিতে শুভেন্দু রেলমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘ওয়াকফ আন্দোলনের নামে মুর্শিদাবাদের একাধিক রেল স্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। এতে শুধু জরুরি পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে তা নয়, বরং মানুষের সুরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এই আচরণ বিপজ্জনক। তাই এর পিছনে কারা আছে, সেটা খতিয়ে দেখার জন্য এনআইএ তদন্ত করা প্রয়োজন।’
একইসঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং সামগ্রিক ভাবে এনআইএ তদন্তের দাবিতে এ দিনই শুভেন্দু মামলা করেন হাইকোর্টে। আদালতে তাঁর এই আর্জি যে রাজ্য সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই মামলায় আদালত মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্টের এই রায়ে যে রাজ্য সরকারের উপর স্নায়ুচাপ বাড়বে, তা বোঝাতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘আরও একটা থাপ্পড় পড়ল রাজ্য সরকারের গালে।’ শুধু মুর্শিদাবাদ–ই নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনার রাজারহাট–সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার লোক বিক্ষোভের নামে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে বলেও আদালতে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা।
অন্যদিকে, সুকান্ত নিয়ম করে আপডেট দিয়ে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে। তাঁর কথায়, ‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে আছি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। অমিতজি নিজেই গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। শনিবার সকালেও হোম মিনিস্টার অফিসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’
শুক্রবার রাতেই সামশেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ান–সহ বেশ কিছু থানা এলাকায় সংবিধানের ৩৫৫ ধারা লাগু করার দাবি তুলেছিলেন শুভেন্দু। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের প্রশ্নে শুভেন্দুর সঙ্গে সুকান্তর অবস্থানের সূক্ষ্ম ফারাক রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সাবধানে পা ফেলতে চাইছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। এ দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সুকান্ত বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের পক্ষপাতি নই। কোনও রাজ্যে বিরোধী সরকারকে সরানোর জন্য ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করি না আমরা, এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাংলায় যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে।’ এ প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘রাজ্যের নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলায় রাষ্ট্রপতি শাসন বা তার অনুরূপ কিছু প্রয়োগ করার সুযোগ সংবিধানে নেই। তবে এটাও ঠিক, পশ্চিমবঙ্গকে যদি বাঁচাতে হয়, তবে আউট অফ ওয়ে কিছু করতে হবে।’