• কোর্টে কারা বিরোধিতায় সরব! সতর্ক করছে রাজ্য সরকার
    এই সময় | ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: বিকাশ ভবনের বৈঠকে শুক্রবার চাকরিহারারা গিয়েছিলেন নিজেদের চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায়। সেই আশায় আলোর সঞ্চার করতে না পারলেও রাজ্য সরকার বিরোধী চেনার পাঠ দিয়েছে চাকরিহারাদের। সূত্রের খবর, মিটিংয়ে বার বারই শিক্ষা দপ্তরের শীর্ষকর্তারা চাকরিহারাদের পরামর্শ দিয়েছেন, ১৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ যে আপিল করেছে, তার বিরোধিতা কারা কারা করছে তার হিসেব নিজেদের কাছে রাখতে।

    ওইদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও বলেন, ‘আমরা তো বার বারই ওঁদের (চাকরিহারাদের) বলছি, কারা আপনাদের চাকরি রাখতে চায় আর কারা চাকরি খেতে চায়, সে দিকে নজর রাখুন। ১৭ এপ্রিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দায়ের করা মামলার বিরোধিতা কারা করছেন সে দিকে নজর দিন। যাঁরা বিরোধিতা করবেন, জানবেন তাঁরাই চায় না আপনাদের চাকরি থাকুক।’ আর এ ভাবেই মন্ত্রী চাকরিহারাদের ‘মুখ এবং মুখোশ’ আলাদা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

    ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার পরেই তৃণমূল বার বার বিরোধীদের নিশানা করেছে। এমনকী, চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই যাঁদের, তাঁরা চাকরি কেড়ে নিতে চান বলে বিরোধীদের নাম না করে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভায় বার বার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্যের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কে‍ন বিকাশ ভট্টাচার্যকে এরপর রাজনৈতিক ভাবে একঘরে করা হবে না, আমি জানতে চাই।’ এরপর সে পথেই বিকাশ ভবনেও চাকরিহারাদের ভোকাল টনিক দিয়েছেন শিক্ষা দপ্তরের কর্তারা। যা শুনে চাকরিহারাদের নেতা মেহবুব মণ্ডল বলছেন, ‘আমরা বিরোধী–শাসক দু’পক্ষকেই অনুরোধ করতে চাইছি, আপনারা বিবাদ ভুলে রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ছেড়ে এক টেবিলে বসে আলোচনা করুন। কীভাবে যোগ্য বঞ্চিতদের চাকরি ফেরানো যায় তা নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছন।’

    রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, ২০২৬–এ বিধানসভা ভোটের আগে আচমকা ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে তৃণমূল। এই অবস্থা যে বিরোধীদের চক্রান্তের কারণেই হয়েছে, সে কথাই ছড়িয়ে দিতে চান তাঁরা। কারণ, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বাতাবরণকে এই পদ্ধতিতে সহানুভূতিতে পরিণত করা সম্ভব কি না, তা যাচাই করতে চাইছে শাসকদল। যার সূত্র ধরে বৈঠকে সমাধান সূত্র নিয়ে আলোচনায় দিশা না থাকলেও রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা জারি ছিল। বিকাশ অবশ্য এ সব শুনে বলছেন, ‘একশোবার বিরোধিতা করব। তৃণমূলের দুর্নীতিকে সমর্থন করার কোনও মানেই হয় না। কারণ, ওই আবেদনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ দুর্নীতি করে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া একদলকে বহাল তবিয়তে স্কুলে রেখে দিতে চায়।’ বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারির বক্তব্য, ‘মানুষ এতদিনে বুঝে গিয়েছে কে চাকরি খেকো আর কে চাকরি বিক্রেতা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিজেই নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত। তাই তাদের আবেদনের বিরোধিতা তো হবেই। জোরালো ভাবে করা হবে।’

    এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ মেনে অনেক চাকরিহারা শিক্ষকই স্কুলে যাচ্ছেন। কেন যাচ্ছেন সেই প্রশ্ন তুলে আদালত অবমাননার নোটিস দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের সচিব বিনোদ কুমার, শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার অরূপ সেনগুপ্ত, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এই নোটিস দিয়েছেন এসএসসি মামলার মূল মামলাকারী ববিতা সরকার, সেতাব উদ্দিন, নাসরিন খাতুন, লক্ষ্মী তুঙ্গা এবং আব্দুল গনি আনসারি। তাঁদের হয়ে আইনি নোটিস পাঠান আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এবং গোপা বিশ্বাস। নোটিসে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আদালতের স্পষ্ট রায়ের পরেও কীভাবে এই চাকরিহারা শিক্ষকরা স্কুলে যাচ্ছেন? এটা কি আদালত অবমাননা নয়?

    এই রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেও চাকরিহারা শিক্ষকরা রাজপথেই রয়েছেন। এসএসসি ভবনের সামনে শুক্রবার রাতভর অবস্থান বিক্ষোভের পরে শনিবার বেলায় তাঁরা ধর্মতলার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে লাগাতার ধর্না আন্দোলন শুরু করেন।

  • Link to this news (এই সময়)