প্রাণ বাঁচাতে ধুলিয়ান থেকে পালাতে হচ্ছে হিন্দুদের, ছবি পোস্ট করে দাবি শুভেন্দুর
আজ তক | ১৩ এপ্রিল ২০২৫
মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল শুক্রবার। পরিস্থিতি সামাল দিতে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে ভিডিও বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব । বৈঠকে রাজ্যের ডিজিপি জানান, ধুলিয়ান-সহ আশপাশের এলাকায় পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চলছে কড়া নজরদারি। পাশাপাশি তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ১৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন বিএসএফের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে ।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। জানা গিয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় রবিবার সকাল ন’টা থেকে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে টানা রুট মার্চের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বর্তমানে মালদা জেলার কালিয়াচকের পল্লার পুর গ্রামে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ধুলিয়ানের অশান্ত অঞ্চলের মানুষেরা। সংখ্যা প্রায় শতাধিক। রাতেই জলপথে মালদহে আসেন তাঁরা।
মুর্শিদাবাদ থেকে বেশ কিছু হিন্দু পরিবার মালদার দিকে চলে যাচ্ছে প্রাণ বাঁচাতে। এই নিয়ে ট্যুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক ট্যুইটে লিখেছেন,' ধর্মীয়ভাবে উদ্বুদ্ধ ধর্মান্ধদের ভয়ে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে ৪০০ জনেরও বেশি হিন্দু নদী পার হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল এবং মালদহের বৈষ্ণবনগরের দেওনাপুর-সোভাপুর জিপির পার লালপুর হাইস্কুলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বাংলায় ধর্মীয় নিপীড়ন বাস্তব। তৃণমূল কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতি উগ্রপন্থীদের উৎসাহিত করেছে। হিন্দুদের শিকার করা হচ্ছে, আমাদের লোকেরা তাদের নিজের দেশে তাদের জীবনের জন্য দৌড়াচ্ছে! আইনশৃঙ্খলার এই ভাঙন রাজ্য সরকারের লজ্জা। আমি জেলায় মোতায়েন কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী, রাজ্য পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনকে এই বাস্তুচ্যুত হিন্দুদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার এবং এই জিহাদি সন্ত্রাস থেকে তাদের জীবন রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করছি। বাংলা জ্বলছে। সামাজিক কাঠামো ছিঁড়ে গেছে। যথেষ্ট হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, ভয়াবহ হিংসা ছড়িয়েছিল মুর্শিদাবাদে। একেবারে ভয়াবহ হিংসা। একের পর এক সরকারি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। তুমুল অশান্তি। পুলিশ অশান্তি মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা কতটা সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে ভয়াবহ তাণ্ডব মুর্শিদাবাদে। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে জেলায় জেলায় অশান্তি সামলাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর এই দাবি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। শুভেন্দুর আবেদনকে গুরুত্ব দিয়েই মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ হিংসার জেরে অনেকেই ঘরছাড়া বলে অভিযোগ করছে বিজেপি। এই নিয়ে হাতে যৎসামান্য জিনিসপত্র নিয়ে গঙ্গাপারে এসে ভিড় করা মানুষজনের ভিডিয়ো পোস্ট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তোপ দেগেছেন বিজেপি নেতারা। অমিত মালব্য, শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী, সুকান্ত মজুমদার, কেয়া ঘোষরা এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছেন। তাঁরা সবাই অভিযোগ করেছেন, প্রাণ বাঁচাতে বহু আতঙ্কিত মানুষ শেষ সম্বলটুকু নিয়ে ধুলিয়ান থেকে বৈষ্ণবনগরের পারলালপুরে পালাচ্ছেন।