সুমন ঘোষ ■ লোধাশুলি
প্রজননের সময় আসন্ন। নিয়ম মেনে ঘটছে শারীরিক পরিবর্তনও। তবু এখনও কেন সাইবেরিয়া থেকে আসা প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লোভারের দল ঝাড়গ্রামে কেন? সেটাই ভাবাচ্ছে পক্ষীপ্রেমী থেকে গবেষকদের।
পশ্চিমবঙ্গ বায়োডার্ভিসিটি বোর্ডের পক্ষী গণনার কাজে যুক্ত গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সুদূর আলাস্কা, সাইবেরিয়া থেকে এই পাখির দল পরিযান শুরু করে শীতের সময়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভারত–সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরতে এসে আবার ফিরে যায় মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যেই। কারণ, এই প্রজাতির পাখির প্রজননের সময়টা হল মে, জুন ও জুলাই। প্রজনন ঘটে সাইবেরিয়া ফেরার পরে।
সে সময় স্ত্রী পাখিদের শরীরের পরিবর্তন ঘটে। পুরুষ পাখিকে আকর্ষণ করার জন্য তাদের পালক হয়ে ওঠে ঝকঝকে এবং সাধারণ সময়ের থেকে অনেক বেশি রঙিন। সেই আকর্ষণেই পুরুষ পাখিরা তাদের কাছে যায় মিলনের জন্য। ইতিমধ্যেই ঝাড়গ্রামে ঘুরতে আসা ওই পরিযায়ীদের সেই শারীরিক পরিবর্তনও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবু গরমের মধ্যেও এই পাখিগুলি ঝাড়গ্রামের লোধাশুলির কাছে থাকা শাঁকবান্ধির জলাশয়ে কী ভাবে রয়েছে? সেটাই ভাবাচ্ছে গবেষকদের।
বায়োডার্ভাসিটি বোর্ড রাজ্য জুড়ে যে পাখি গণনা করে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বিষ্ণুপুরে সেই দায়িত্বে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর সুকুমার সেনগুপ্ত মহাবদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুমন প্রতিহার। তিনি বলেন, ‘ভারতে এদের প্রজননের রেকর্ড নেই। সাইবেরিয়া ফিরেই প্রজনন করে। তাই অবাক লাগছে, প্রজননের সময় এসে যাওয়ার পরেও কেন এই পাখির দল এখনও এখানে!’ সুমনের সহকারী পবিত্র মাহাতো বলেন, ‘ওই জলাধারটিতে মানুষের যাতায়াত কম। ফলে পাখির দল বিরক্ত হয় না। রয়েছে পর্যাপ্ত খাবারও। জঙ্গল লাগোয়া হওয়ায় গরমও ততটা তীব্র নয়। তাই হয়তো থেকে গিয়েছে।’
কিন্তু তা হলে কি এ বার অঘটনও ঘটতে পারে? এখানেই প্রজনন হবে না তো? তা হলে কিন্তু নতুন ইতিহাস তৈরি হবে। তাই নিয়মিত সেখানে যাচ্ছেন গবেষকেরাও। নজর রাখছেন তাঁরা। যদি প্রজনন ঘটে যায়, তা হলে বাচ্চাগুলি কেমন হবে? সেগুলিকে কী ভাবে বাঁচাবে ওরা? নানা প্রশ্নের পাশাপাশি নতুন কিছু পাওয়ার জন্য উত্তেজনাও রয়েছে গবেষকদের মধ্যে।
গবেষকরা আরও জানাচ্ছেন, প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লোভার সাধারণত দিনে ২ হাজার মাইল একটানা পরিযান করতে সক্ষম। তবে এই গ্রুপেরই বিশেষ কিছু পাখি সাইবেরিয়া থেকে এক টানা প্রায় ৩ হাজার মাইল পরিযান করে হাওয়াই দ্বীপে পৌঁছয় মাত্র ৩-৪ দিনেই! তারপর সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। আগে ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জঙ্গল লাগোয়া শাঁকবান্ধি জলাশয়ে এই ধরনের প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লোভারদের দেখা মিলত না। চলতি বছরই প্রথম দেখা মেলে ৭-৮টি পাখির। আর প্রথম বছরেই কি ‘অঘটন’ ঘটার আশঙ্কা? দেখার অপেক্ষায় দিন গুনছেন গবেষকরাও।