সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নদীর পাড়ে ৪৯ মিটার পর্যন্ত সৌন্দর্যায়ন ছাড়া কোনও কিছুর নির্মাণ নিষিদ্ধ। অথচ সেই নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই হাওড়া জেলা জুড়ে গঙ্গা নদীর পাড় দখল করে গজিয়ে উঠেছে অনেক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ছোট কারখানা এবং বাড়িঘর। তার ফলে ধীরে ধীরে বেদখল হয়ে যাচ্ছে গঙ্গা। ভাঙছে নদীর পাড়। পয়ঃপ্রণালী থেকে দূষিত হচ্ছে গঙ্গার জল।
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনবহুল এলাকা হলো হাওড়া স্টেশন। হাওড়া স্টেশন দিয়ে রোজ লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন। হাওড়া স্টেশনের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে হুগলি নদী। হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন হুগলি নদীর পাড় দখল করে, নদীর বুকে পিলার তুলে তৈরি হয়েছে অসংখ্য হোটেল ও রেস্তোরাঁ। সেখান থেকে গঙ্গায় দূষণ ছড়াচ্ছে, এই অভিযোগে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলায় কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, ওই হোটেলগুলির প্রত্যেকটি বেআইনি। শুধু তাই নয় হাওড়া স্টেশনের লাগোয়া গঙ্গার পাড়ে লঞ্চ চলাচলের জন্য যে জেটি রয়েছে সেটাও পুরোপুরি অবৈধ। জেটির মালিক ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমিতি–কে জবরদখলকারী বলে উল্লেখ করেছে তারা।
হাওড়ার শিবপুর, ঘুসুড়ি, সালকিয়া বাধাঘাট এলাকাতেও নদীর পাড় দখল করে বহু কারখানা ও গোডাউন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু গোডাউন তৈরি হয়েছিল ইংরেজ আমলে। যখন এই গুদামঘরগুলো তৈরি হয় তখন নদী থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও, পরবর্তী কালে তার মালিকানা বদলের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রও পাল্টে যায়। অধিকাংশ গোডাউন বাড়তে বাড়তে হুগলি নদীর ধার পর্যন্ত চলে এসেছে।
এক সময়ে গঙ্গাসাগরে যাওয়ার আগে সাধু–সন্ন্যাসীরা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য হাওড়ার ঘুসুড়ি এলাকায় পণ্ডিত ঘাট–সংলগ্ন এলাকায় তাঁবু খাঁটাতেন। যেরকমটা বাবুঘাটের পাশে দেখা যায়। সেই পণ্ডিত ঘাট বুজিয়ে তৈরি হয়ে গিয়েছে আস্ত একটা কারখানা। সেই ঘাটের এখন আর কোনও অস্তিত্বই নেই।
হাওড়ার শিবপুরের কাছে একটি বেসরকারি আবাসনের বিরুদ্ধে হুগলি নদীর পাড় দখলের অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে নদীর গতি বাধাপ্রাপ্ত পাচ্ছে। হোটেলের আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে হুগলি নদীর জল।
কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, নদীর পাড় থেকে জবরদখল সরানো পুলিশের কাজ। তাই এ ব্যাপারে তাঁদের হাত–পা বাঁধা। হাওড়া সিটি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ সিভিল ম্যাটার। যতক্ষণ না কেউ অভিযোগ করছে তাঁদের পক্ষে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া মুশকিল। তাছাড়া এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। আদালতে বেশ কয়েকটি মামলাও চলছে। তাই পুলিশ স্বতপ্রণোদিত হয়ে কিছু করতে চায় না।’
পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘বছরের পর বছর এ ভাবে গঙ্গার পাড় দখল করে বেআইনি নির্মাণ করে ব্যবসা চলছে। কারও কোনও হেলদোল নেই। প্রশাসনের উচিত, এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে গঙ্গার অন্তর্জলী যাত্রা কেউ আটকাতে পারবে না।’