শনিবার ইনস্টাগ্রামে নিজের দুটি ছবি পোস্ট করেছিলেন ইউসুফ পাঠান। প্রাক্তন ক্রিকেটার ছবিদুটির ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘সহজ বিকেল, ভালো চা, এবং শান্ত পরিবেশ। মুহূর্তে ডুব দিয়েছি।’ অন্য সময়ে হলে এই পোস্ট নিয়ে কারও মাথা ব্যথা থাকত না। কিন্তু সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কয়েকটি অংশে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। আর প্রাক্তন ক্রিকেটার হওয়ার পাশাপাশি ইউসুফ পাঠান বহরমপুরের সাংসদ। কাজেই তাঁর ‘ভালো চা’-এর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানাতে দেরি করেনি বিজেপি।
রবিবার বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘বাংলা জ্বলছে। হাইকোর্ট বলেছে যে তারা চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে। পুলিশ নীরব, কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের রাজ্যের সুরক্ষা দেওয়া হিংসাকে উৎসাহিত করছেন! হিন্দুদের যখন হত্যা করা হচ্ছে সাংসদ ইউসুফ পাঠান চায়ে চুমুক দিচ্ছেন এবং মুহূর্ত উপভোগ করছেন... এটাই তৃণমূল।’
তৃণমূল সাংসদের অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ‘বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে বাইরে থেকে লোক আমদানি করলে, এমনই হয়’, বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
শুধু বিজেপিই নয়, নেটিজ়েনদের একাংশও মুর্শিদাবাদের বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে ইউসুফ পাঠানের এই ছবি পোস্ট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেছেন, বহরমপুরের সাংসদ যেন ‘আধুনিক সম্রাট নিরো’। ৬৪ খ্রীষ্টাব্দে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯ দিন ধরে জ্বলেছিল রোম শহর। শহরের ৭১ শতাংশ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। রোম যখন জ্বলছিল সেই সময় সম্রাট নিরো নাকি হার্প বাজাচ্ছিলেন। পাঠানের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট অনেককেই সেই মিথের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
ইউসুফ পাঠান বা তৃণমূল কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই সমালোচনার কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। এ দিকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে একটি জিবলি স্টুডিয়ো শৈলীর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহাস করা হয়েছে।
গত শুক্রবার সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ-সহ বাংলার বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল। পুলিশ ভ্যান-সহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া, রাস্তা অবরোধে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মুর্শিদাবাদ জেলাতেই সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ কর্মী-সহ বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন।
এখনও পর্যন্ত ১৮০ জনেরও বেশি লোককে সংঘর্ষে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হিংসাত্মক বিক্ষোভের মধ্যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে ওয়াকফ সংশোধনী আইন কার্যকর করা হবে না। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পর কলকাতা হাইকোর্ট হিংসা কবলিত এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে।