দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ
ভারতমালা প্রকল্পের বারাণসী-রাঁচি-কলকাতা গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্য খানাকুলের যে–যে এলাকা দিয়ে ম্যাপ গিয়েছে, সেই এলাকায় জমি অধিগ্রহণ ও বাড়ি ভাঙার নোটিস সাঁটানো হলো। দাগ দেওয়া হলো বাড়ি, জমি ও এলাকায় থাকা সমস্ত গাছে। এমনকী, নাম্বারিংও করে দেওয়া হয় হাইওয়ের পক্ষ থেকে।
হঠাৎ এই নোটিসে মাথায় হাত গ্রামবাসীদের। যদিও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। তবে, বসতবাড়িটুকুও চলে গেলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়বেন তাঁরা। ফলে, এখন থেকেই দুর্ভাবনার পাহাড় জমেছে মাথায়। নাওয়া–খাওয়া সবই গিয়েছে। তবুও, উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিতে রাজি তাঁরা।
কিন্তু ভিটে আর বসতবাড়ি দিতে নারাজ। এমনই পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন খানাকুল ২ নম্বর ও খানাকুল ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্ভুক্ত একাধিক গ্রামের বহু মানুষ। জানা গিয়েছে, কলকাতা–রাঁচি–বারাণসী গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। মোট ৬১০ কিমি এই রাস্তা তৈরি হবে ছয় লেনের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৪–এর ফেব্রুয়ারিতে বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
এর পরেই শুরু হয় গোটা এলাকার মাপজোক। শুরু হয়, ম্যাপ অনুযায়ী এলাকা চিহ্নিতকরণ। কলকাতা থেকে হাওড়া হয়ে এই রাস্তা খানাকুলের বিস্তীর্ণ এলাকার উপর দিয়ে মোট ১৭ কিমি এলাকাজুড়ে খানাকুল ১ ও ২ নম্বর ব্লকের উপর দিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে খানাকুল ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্ভুক্ত একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা রয়েছেন। আর সেই ভাবেই দাগ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
এ দিকে, বাড়ি–বাড়ি দাগ দেওয়া, নোটিস ঝোলানো শুরু হয়ে যাওয়ায় মহা বিপদে পড়েছেন এই এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, বহু কষ্টে তাঁরা এই বন্যা–কবলিত এলাকায় বাড়ি করেছিলেন। এখন তা ভাঙা পড়বে। পাশাপাশি, তাঁদের জমি–জায়গা, গাছপালা সবই চলে যাবে রাস্তায়।
যদিও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও তাঁদের জানানো হয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণ কবে দেওয়া হবে, কতটাই বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা তাঁরা জানেন না। এমনকী, কী ভাবে, কাদের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি তাঁদের। তাতে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
সব মিলিয়ে নতুন কলকাতা রাঁচি–বারাণসী গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ের গর্ভে চলে যাবে অগণিত মানুষের সব কিছুই। মাথায় হাত তাঁদের। তবে যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পেলে তাঁদের যে প্রভূত ক্ষতি হয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই এলাকার বাসিন্দা, যাঁদের ঘর–বাড়ি–জমি, এমনকী, তাঁদের বাগানের গাছও চলে গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে
শ্রীমন্ত পরামানিক, গণেশ পাখিরা, নির্মল মান্না, মামনি ঘোষ, নিমাই মাঝি, বেলা রানি মাঝি, জয়ন্ত মাঝিরা রীতিমতো চিন্তিত। বন্যা কাটিয়ে বহু কষ্টে, সবে একটা বসতবাড়ি করেছেন। কিন্তু সেটাও হাইওয়ে অথরিটি নিয়ে নিচ্ছে। বাড়ির দেওয়ালে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
শ্রীমন্ত পরামানিক, গণেশ পাখিরা, নির্মল মান্না, জয়ন্ত মাঝি–সহ একাধিক জনের বক্তব্য, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিয়ে দেবো। কিন্তু তার ক্ষতিপূরণ আগেই দিতে হবে এবং বাজারদরের তিন গুণ বেশি দাম দিতে হবে। কারণ, সব চলে গেলে সবাই থাকবেন কোথায়? আগে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলে, অন্য স্থানে থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে এই বিষয়ে হাইওয়ে অথরিটির কারও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে খানাকুলের ২ নম্বর বিডিও মধুমিতা ঘোষ বলেন, ‘দেখুন, এটা তো সরকারের ব্যাপার। যেটা হাইওয়ে অথরিটি শুরু করেছেন, সেটা তো জেনারেল নোটিস। এর পরে হিয়ারিং হবে। সবাইকে ডাকা হবে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা নজর রেখেছি, যাতে সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে হয়ে যায় তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’