এই সময়, মালদা: রাস্তাঘাটে নাকি যখন তখন ভূতের দেখা পেতেন বাড়ির গৃহকর্তা! শুধু তাই নয়, ঘুমিয়ে থাকার সময়ে স্বপ্নেও নাকি অশুভ আত্মা তাঁকে 'ডাকত'! এমন আজগুবি কথাও বাড়ির লোকেদের মাঝেমধ্যেই বলতেন পেশায় কলমিস্ত্রি বিশু বিশ্বাস (৩৩)।
কুসংস্কার বলে বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না পরিবারের লোকেরা। কিন্তু তাঁর যে যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন, সেটা তাঁরা করাননি। শেষ পর্যন্ত বাড়ির লোকের অলক্ষ্যেই শোবার ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন ওই ব্যক্তি। মৃত্যুর আগেও ভুতের ভয়ের কথা বলে যান স্ত্রী ও বোনকে। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিমল দাস কলোনি এলাকায়। বাড়ির একমাত্র রোজগেরের মৃত্যুতে পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী মালা বিশ্বাস। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে স্ত্রীকে মুদিখানা থেকে মুড়ি আনতে বলে শোওয়ার ঘরে সিলিং-এর সঙ্গে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে আত্মঘাতী হন বিশু।
মৃতের স্ত্রী মালা বলেন, 'মুদিখানার দোকান থেকে ফিরে এসে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় প্রতিবেশীদের দিয়ে সেটি ভাঙা হয়। দেখা যায়, ঘরে স্বামীর ঝুলন্ত দেহ। বিয়ের পর থেকে এ রকম সমস্যা ছিল না। তবে কয়েক মাস ধরে আমাকে ভূতের ভয়ের কথা বলতেন স্বামী। সন্ধ্যার পরে বাড়ি থেকে বেরোতেন না। স্বপ্নেও নাকি অশুভ আত্মা তাকে ডাকছে বলে জানাত।
এলাকার এক গুণীনের কাছেও নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয় নি। এ দিন সকালেও ভূতের ভয়ে কাঁপছিল। আমাকে পাশের মুদির দোকান থেকে মুড়ি, চা পাতা, চিনি কিনে আনতে বলে।' শাশুড়ি পুষ্পা হালদারের কথায়, 'জামাই খুব ভালো ছিল। কোনওদিন অশান্তি করেনি। কোনও নেশাও ছিল না। ওর আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।'
মৃতের বোন রিঙ্কি চৌধুরী জানান, মাঝেমধ্যেই দাদা ভূতের কথা বলতেন। ওর চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। বাড়ির লোকেরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আচমকা এমন ঘটে গেল। ভূতের বিষয়টি স্রেফ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক সুনীল দাস বলেন,'ওই ব্যক্তির মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে হয়তো এ রকম ঘটনা ঘটত না।'
মালদার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এম মাহাতোর বক্তব্য, 'সুস্থ মানুষকেও অনেক সময়ে অসংলগ্ন আচরণ করতে দেখা যায়। এটাকে 'ফাসমোফোবিয়া' অর্থাৎ ভূতের ভয়ে উদ্বেগজনিত ব্যাধি বলা যেতে পারে। হঠাৎ করে চোখের সামনে কোনও দুর্ঘটনায় মৃত্যু অথবা রক্তপাত দেখা কিংবা ঘনিষ্ঠ কারও মৃত্যুর ঘটনা অনেক সময়ে মস্তিষ্কে আঘাত করে। তার প্রভাবে এমন হতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিলে এই অসুখের প্রতিকার সম্ভব।'