• ‘আপনার ছেলে ফুর্তি করছে’, এই মন্তব্য শুনতে হয়েছে অয়ন মণ্ডলের পরিবারকে স্থানীয় থানার বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের অভিযোগ
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দশমীর রাত পেরিয়ে সকাল হল। তখনও বাড়ির ছেলে বাড়ি ফেরেনি। ২১ বছরের অয়ন মণ্ডলের বাড়ির লোক উদভ্রান্তের মতো ছুটে যান হরিদেবপুর থানায়। সহযোগিতা তো দুরস্ত, স্থানীয় থানার অমানবিক চেহারা দেখতে পায় অসহায় পরিবার। বাড়ির লোকের দাবি, ডিউটি অফিসার জানান,  এটা রিজেন্ট পার্কের কেস। সময় নষ্ট না করে তাঁরা দৌড়ে যান রিজেন্ট পার্ক থানায়। সেখান থেকেও প্রত্যাখান। বলা হয়, এটা হরিদেবপুর থানার কেস। রিজেন্ট পার্ক থেকে হরিদেবপুরে ফোন করে গোটা বিষয়টা জানানো হয়। অগত্যা আবারও হরিদেবপুর। দীর্ঘক্ষণের অপেক্ষা। একটা সময় নিখোঁজ ছেলেকে নিয়ে পুলিসের মন্তব্য উড়ে আসে, আপনার ছেলে ঘুরতে গিয়েছে। ফূর্তি করছে। অয়ন যে দশমীর রাতে তাঁর বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেটা পুলিসকে জানানো হয়। তখন একটু নড়েচড়ে বসেন থানার ‘বাবুরা’। অয়নের বান্ধবীর বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়। 

    মেয়ের বাবা দীপক জানা আবার মুহুরি। ওই থানার আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর দিনরাত ওঠাবসা। পরিবারের দাবি, মুহুরির নাম উঠতেই থানার আধিকারিকরা কেস ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। থানার দায়িত্বে থাকা অন্যান্য আধিকারিকরাও অভিযোগ না করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এরই মাঝে বান্ধবীর পরিবার অয়নের নামে মারধর ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নেয় পুলিস। মুহুরির পরিবারের সকলকে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। তাঁদের আলাদা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, আলাদা ঘরে বসিয়েই ‘রফা’ হয়। পরে ছেড়েও দেওয়া হয়। পুলিস অবশ্য এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। একাদশীর দিনটা এভাবেই কেটে যায়। পরের দিন সকাল দশটায় হরিদেবপুর থানায় অয়নের মৃতদেহ পাওয়ার খবর আসে। তখনও পরিবারের লোককে কিছুই জানানো হয়নি। বিভিন্ন সূত্র মারফত্ অয়নের বাড়ির লোক এই মর্মান্তিক খবরটি পান। 

    প্রতিবেশীদের বক্তব্য, পুলিস সেই সকালে তত্পর হলে হয়তো তরতাজা তরুণের প্রাণ বেঁচানো যেত। প্রশ্ন উঠছে, এই ঘটনার পরেও হরিদেবপুর থানার ওই দুই পুলিস আধিকারিক কেন ছাড় পেলেন? যদিও সূত্রের খবর, তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাফিলতি এবং কেস ধামাচাপা দেওয়ার নিদর্শন এখানেই শেষ নয়। সূত্রের খবর, থানার মুহুরি সিন্ডিকেটের এক পান্ডা বান্ধবীর বাবাকে দেহ উদ্ধারের খবর দিয়েছিলেন। সেই পান্ডাকে আবার শুক্রবার রাতে কালো-নীল রঙের জামা গায়ে থানার বাইরে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতেও দেখা গিয়েছিল। মেয়ের মায়ের সঙ্গে অয়নের ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে দীপক জানা আগেই জেনেছিলেন। অয়নকে ভয় দেখানো হয়েছিল। এরপর দশমীর রাতে পরিকল্পনা করেই তাঁকে বাড়িতে ডাকা হয়। বেধড়ক মারধর করে অচৈতন্য করে দেওয়া হয় অয়নকে।  

    শনিবার আলিপুর আদালতে ধৃতদের আইনজীবী বরুণকান্তি সোম ও রাজু গঙ্গোপাধ্যায়ও পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আমাদের মক্কেলকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ছ’টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন আগে তাঁরা কোথায় ছিলেন? অয়নকে ইট দিয়ে ঠিক কখন আঘাত করা হয়েছিল, সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা রেখেছে পুলিস। আইনজীবীদের আরও অভিযোগ, অভিযুক্তদের বয়ান রেকর্ড করার সময় আইন মেনে ভিডিও রেকর্ডও করা হয়নি। এই সমস্ত প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তদন্তকারী পুলিস আধিকারিক।
  • Link to this news (বর্তমান)