ভোটার তালিকার সংশোধন নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। রবিবারের সেই শিবিরে দেখাই গেল না এলাকার একাধিক নেতা-কাউন্সিলারকে। ছিলেন না জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন, জেলা যুব সভাপতি শুভদীপ মুখোপাধ্যায়, কোন্নগর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন দাস, উত্তরপাড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান খোকন দাস, রঘুনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কেষ্ট মণ্ডল-সহ একাধিক জন। অনুপস্থিত নেতারা জেলার যথেষ্ট পোড়খাওয়া মুখ। সংগঠনে তাঁদের প্রভাব নেহাত কম নয়। স্বভাবতই তাঁদের এই অনুপস্থিতি প্রশ্ন তুলছে, তবে কি এখানেও গোষ্ঠীকোন্দল? কাঞ্চনের দাবি, কোনও দলাদলির প্রশ্নই নেই। যাঁরা আসতে পারেননি, ব্যক্তিগত কাজ ছিল। কিন্তু অনুপস্থিত নেতাদের একটা অংশের দাবি, এই মিটিংয়ের ১৫-২০ মিনিট আগে ফোন করে বলা হয়েছে, চলে আসতে। এ ভাবে কারও পক্ষেই যাওয়া সম্ভব নয়।
ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা নাম বাদ দেওয়ার কাজ কী ভাবে করতে হয়, তার জন্য তৃণমূল তাঁদের বুথস্তরের এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। রাজ্যজুড়েই তা হচ্ছে। এ দিন উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকায় তেমনই প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। কিন্তু সেখানে দলের একটা বড় অংশের নেতাদের অনুপস্থিতি প্রশ্ন তুলে দিল কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় নিয়ে।
প্রশিক্ষণ শিবিরের সামনে এসেও এ দিন ফিরে যান উত্তরপাড়ার উপ পুরপ্রধান খোকন মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, ‘কেন এত জন এলেন না, সেটা ভাবার বিষয়। ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির। সকল নেতা-কর্মী মিলে এ কাজ করার কথা। আর সব সময় বিধায়ককে তো আর পাই না। তাঁকে ফোনেও পাওয়া যায় না। তাই স্থানীয় সকলকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কাজ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।’
উত্তরপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বুথ স্তরের এজেন্টদের প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয় এ দিন ফণীন্দ্র ভবনে। ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনকে মাথায় রেখেই আগামী দিনে উত্তরপাড়া বিধানসভায় কাজ কী ভাবে হবে, এজেন্টদের কাজ কী, ভোটার লিস্ট নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয় এ দিনের অনুষ্ঠানে। কিন্তু সেখানে দেখা যায় বিধানসভার একটা বড় অংশের তৃণমূল নেতাদের অনুপস্থিতি।
কোন্ননগর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুভাশিস চৌধুরী বলেন, ‘একেবারে শেষ মুহূর্তে বিধায়ক ফোন করেছিলেন। আমি বললাম, কী নিয়ে মিটিং সেটাই জানি না। ১১টায় মিটিং। অথচ ফোন এল সাড়ে ১০টা পৌনে ১১টা নাগাদ। আজ আমাদের নীল ষষ্ঠীর পুজো। গঙ্গার ঘাটে প্রচুর ভিড়। আমরা তা নিয়ে ব্যস্ত। অন্য কাউন্সিলাররাও ব্যস্ত। আর ভোটার লিস্ট সংশোধন শুনছি দলের কাউন্সিলারদের বাদ দিয়েই হবে। এখানে দল যা ঠিক করবে, তাই হবে। যদি কখনও মনে হয় আমাদের কাজে লাগবে, আমরা সব সময়েই আছি।’
বিষয়টি যে অনুপস্থিত নেতারা খুব ভালো ভাবে নেননি, তাঁদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট। যদিও কাঞ্চন মল্লিককে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কিছু বলব না। সকলকেই জানানো হয়েছে। নিশ্চয়ই না আসার কোনও কারণ থাকতে পারে। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি ব্যক্তিগত কাজে ছিলেন। জেলা সভাপতির সঙ্গেও কথা হয়েছে। আর আমন্ত্রণপত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপেও জানানো হয়েছে।’ তা হলে কি দলের অন্দরে মতবিরোধই স্পষ্ট হচ্ছে না? শুনেই থমকালেন কাঞ্চন, তার পর বিধায়কের জবাব, কোনও মতবিরোধের অবকাশই নেই।