• ‘শিক্ষিকা নন, বন্ধু…’, পাঠশালা চলছে, নেই শুধু সামিনা ম্যাম, মন ভালো নেই পড়ুয়াদের
    এই সময় | ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • মণিরাজ ঘোষ

    প্রতিদিন স্কুলের গেটে সামিনা ম্যামের জন্য দাঁড়িয়ে থাকত ছাত্রছাত্রীরা। তিনি গাড়ি থেকে নামলেই ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে জড়িয়ে ধরত। মিষ্টি স্বভাব ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের জন্য শালবনির কলাইমুড়ি নেতাজি সুভাষ হাইস্কুলের পড়ুয়াদের খুব পছন্দের শিক্ষিকা ছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল বাতিল করার পর চাকরিহারা হয়েছেন এই স্কুলের শিক্ষিকা সামিনা খাতুন। তাঁর চাকরি যেতেই ভেঙে পড়েছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। সামিনা স্কুলে একাদশ-দ্বাদশে দর্শন পড়ানোর পাশাপাশি পঞ্চম-দশম শ্রেণিতে ভূগোল ও ইংরেজি পড়াতেন। কলাইমুড়ি হাইস্কুলে পঞ্চম-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। প্রধান শিক্ষক-সহ শিক্ষক, শিক্ষিকা ছিলেন ৭ জন। সামিনা খাতুনের চাকরি হারানোর পর বর্তমানে শিক্ষক, শিক্ষিকার সংখ্যা ৬ জন।

    সামিনা খাতুনের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সুভাষ জানা বলেন, ‘সামিনা খুব সুন্দর ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতেন। আমাদের শিক্ষক সংখ্যা খুবই কম, একাদশ-দ্বাদশের দর্শনের শিক্ষিকা হলেও পঞ্চম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত ভূগোল ও ইংরেজি পড়াতেন। ওঁর পড়ানো মুগ্ধ হয়ে শুনত ছাত্রছাত্রীরা। ছেলেমেয়েদের সহজভাবে পড়া বোঝাতেন। তাই ছাত্রছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।’

    স্কুলের একজন শিক্ষিক তাপস প্রামাণিক বলেন, ‘প্রার্থনা সভায় বাণী পাঠ দিয়ে ওঁর দায়িত্ব শুরু হতো। পড়ানো ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রবন্ধ লিখে দেওয়া, আবৃত্তি শেখানো সবেতেই পারদর্শী ছিলেন তিনি।’ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি মন খারাপ পড়ুয়াদেরও। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা বলে, ‘সামিনা ম্যামকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগছে না। উনি আমাদের শিক্ষিকা নন, বন্ধু ছিলেন। কঠিন বিষয়গুলো সহজ করে পড়াতেন। উনি কখনও আমাদের বকতেন না, বোঝাতেন।’

    ‘এই সময় অনলাইন’-কে কলাইমুড়ি হাইস্কুলের শিক্ষিকা সামিনা বলেন, ‘শুধু মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েই নয়, কচিকাঁচাগুলোর টানে মঙ্গলবার আমি স্কুলে গিয়েছিলাম। গাড়ি থেকে নামতেই ছাত্রছাত্রীরা আমাকে জড়িয়ে ধরে। এটা প্রতিদিনের রুটিনও ছিল। গেট থেকে আমাকে নিয়ে স্টাফ রুমে পৌঁছে দিত। তারপর নিজেরা ক্লাসে যেত। ওদের ছেড়ে একটুও ভালো লাগছে না।’

    ২০১৫ সালে সেট পাশ করার পর ২০১৬ সালে এসএসসি পাশ করেন সামিনা খাতুন। মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সবেতেই তিনি ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাশ করেছেন। ২০২১ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরে শালবনির কলাইমুড়ি নেতাজি সুভাষ হাইস্কুলে যোগদান করেছিলেন সামিনা। নিজের মিষ্টি স্বভাবের জন্য অল্পদিনেই সকলের প্রিয় হয়ে ওঠা সামিনা খাতুনের মন ভালো নেই। ভালো নেই, স্কুলের কারও মনও।

  • Link to this news (এই সময়)