মাস গেলে বাড়িতে ৬০ টাকা কেজি দরে চাল কিনে আনতেন তিনি। এখন খরচ বাঁচাতে ৩০ টাকার চালে নেমে এসেছেন। একটু মোটা, লালচে। তবে এখনও পেটটা ভরে যায় স্ত্রী, মেয়ে, বাবা-মায়ের। পাঁচজনের সংসার। সবটাই করতে হয় বুঝে।
কিন্তু চাল, নুন, তেলের বাজেটে কাটতি করেও কি খরচের ধাক্কা সামলানো যাবে? এই প্রশ্নেই নিজেকে ‘দিশাহীন’ বলে দাবি করেছেন হাওড়া গ্রামীণের চাকরিহারা শিক্ষক বিকাশ দাস (নাম পরিবর্তিত)। তিনি বলেন, ‘হেঁশেল টানব কী ভাবে জানি না। সবাই বলছে টিউশন করতে। আমার কথা হলো, সবাই যদি পড়াবে, তাহলে পড়বেটা কে? দিনমজুরি ছাড়া দিশা দেখছি না!’
হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। মাসের শেষে অ্যাকাউন্টে বেতন ঢুকবে কি না, সেই সদুত্তর প্রশাসনের তরফে এখনও পাননি। ফলে ইএমআই, ওষুধ, হেঁশেল সব মিলিয়ে দিশেহারা বহু মানুষ। তালিকায় রয়েছেন বিকাশও।
তিনি বলেন, ‘আমি হাইকোর্টের রায়ের পর থেকেই বুঝেছিলাম চাকরির উপর খাঁড়া ঝুলছে। সেই সময় থেকেই অল্প স্বল্প টাকা বাঁচাতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু এক বছরে আর কত টাকাই বা জমাব? সংসার খরচ তো রয়েছে?’
এ দিকে এত কথার ভিড়ে ‘ভরসা’ শব্দটাই হারিয়ে ফেলেছেন বিকাশ। তাই চাকরি ফিরবে কি না, শুধু সেই কথা ধরে বসে থাকতে নারাজ তিনি। মাঝে কয়েকদিন কাজ খুঁজেছিলেন। সেই সময়েই যেন ১০০ ভোল্টের বিদ্যুতের ঝটকা খান তিনি।
টিউশনের ‘বাজারে’-ও বিরাট কম্পিটিশন। হাল্কা হেসে বিকাশ বলেন, ‘এত ছাত্র কোথায়? আমার কিছু বন্ধু, যাঁদের চাকরি গিয়েছে তাঁরা কেউ কেউ অন্য কাজ শুরু করেছে, কেউ আবার টিউশন পড়াচ্ছে। প্রয়োজনে দিনমজুরিও করতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত’, শুকনো গলায় জানালেন বিকাশ।
হাইস্কুলের চাকরি পাওয়ার আগে তিনি প্রাথমিকে চাকরি পেয়েছিলেন। এখন সেই চাকরি ফেরত পাওয়ার মরিয়া আবেদন করছেন তিনি। বিকাশ বলেন, ‘আমার এক বন্ধু এয়ার ইন্ডিয়ার চাকরি ছেড়ে শিক্ষক হয়েছিল। এখন তো ওকে আর পুরোনো কাজের জায়গায় ফিরিয়ে নেবে না! আমাদের কথা আর কে শোনে!’
এই শিক্ষক জানান, সব বিলাসিতা প্রায় এক বছর আগেই ছেড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু, ইএমআই-এর খাঁড়া বাঁচাবে কে? শুকনো চোখে বিকাশ বলেন, ‘সবটাই উপরওয়ালার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আর চোখে জলও আসছে না। আমরা এখন একে অন্যের ভরসা। দেখা যাক…’