• জমির অধিকার নিয়ে মহিলাদের প্রশিক্ষণে রাজ্যে প্রথম শিলিগুড়ি, প্রশংসা পেল মন্ত্রীর
    বর্তমান | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: জমি হাঙ্গরদের দৌরাত্ম্য লাগামহীন! তাই জমির অধিকার নিয়ে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলায় শীর্ষে শিলিগুড়ি মহকুমা। প্রশাসন সূত্রে খবর, একবছরে মহকুমায় টার্গেটের থেকে ২ হাজারের বেশিও মহিলাকে প্রশিক্ষিত করেছে জেলা গ্রামোন্নয়ন সেল। শনিবার এজন্য প্রশাসনের প্রশংসা করেছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। এতে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। 

    মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ বলেন, সকলের সহযোগিতায় জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের মধ্যে শিলিগুড়ি মহকুমা প্রথম স্থানে। এতে মহিলারা যেমন জমির অধিকার বুঝে নিতে পারবেন, তেমনই জমির বেআইনি কারবার নিয়ন্ত্রণ হবে। মহিলাদের অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন হবে। জেলা গ্রামোন্নয়ন সেলের প্রকল্প আধিকারিক মৌসুমি পাত্র বলেন, জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সহযোগিতায় স্বনির্ভরগোষ্ঠীর মহিলাদের ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। 

    শিলিগুড়িতে জমির বেআইনি কারবার দীর্ঘদিনের। শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় পতিত জমি থাকলেও তা বিভিন্নভাবে জমি হাঙ্গররা কব্জা করছে বলে অভিযোগ। কিংবা গ্রামবাসীদের ভুল বুঝিয়ে তাঁদের জমি হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত মহিলারা। অজ্ঞতার কারণে তাঁরা স্বামী বা পৈত্রিক সম্পত্তি বুঝে নিতে পারছেন না। তাই মহিলাদের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই কর্মসূচিতে রাজ্যের অন্যান্য জেলাকে টেক্কা দিয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা। 

    প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়ায় ৬৬০০ মহিলাকে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। একবছরে বেশকিছু কর্মশালা করা হয়েছে। সেগুলি তিন থেকে চারদিনের ছিল। তাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮৭১২ মহিলাকে। সকলেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের খাস ও রায়তি জমি, মিউটেশন, কনভারসন, পর্চা, পৈত্রিক ও স্বামীর ভিটের অধিকার প্রভৃতি বিষয়ে বোঝানো হয়। 

    জেলা গ্রামোন্নয়ন সেলের প্রকল্প আধিকারিক বলেন, লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২১১২ জন বেশি মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এজন্য পঞ্চায়েতমন্ত্রী আমাদের প্রশংসা করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির অগ্রগতি ধরে রাখা হবে। এজন্য এই প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে। 

    রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের মতো এখানেও মহিলাদের হাতে জমির পরিমাণ অনেক কম। প্রশাসন সূত্রে খবর, আইন অনুসারে পৈত্রিক ও স্বামীর ভিটে মহিলাদের পাওয়ার কথা। এখনও সংশ্লিষ্ট অধিকার সম্পর্কে অনেক মহিলা অন্ধকারে। তাই বাবা ও স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁদেরকে সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ। গ্রামোন্নয়ন সেলের এক আধিকারিক বলেন, জমির অধিকার পাইয়ে দিতেই মহিলাদের জমি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। এতে মহিলাদের ব্যাপক উপকার হবে। স্বামী ও বাবার মৃত্যুর পর সন্তান নিয়ে তাঁদের পথে বসতে হবে না। জমি পেলে মাথার উপর ছাদ গড়তে পারবেন। তাঁদের জীবন জীবিকা নির্বাহ সহজ হবে। অসাধু চক্রের হাত থেকে জমিও সুরক্ষিত থাকবে।  
  • Link to this news (বর্তমান)