• মাত্র ১৫০ টাকায় শাড়ি! কাটোয়ায় সেলের বাজারে উপচে পড়া ভিড়
    বর্তমান | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: চৈত্র সেলে মাত্র ১৫০টাকাতেই মিলছে তাঁতের শাড়ি!  এমনকী ওই টাকায় জোড়া টি-শার্টও মিলছে। নববর্ষ শুরুতেই পুরনো স্টক রাখতে চাইছেন না ব্যবসায়ী থেকে তাঁতশিল্পীরা। তাই কাটোয়া শহরে মাত্র দেড়শো টাকাতেই মিলছে শাড়ি। ৩০০-৪০০ টাকায় ভালো তাঁতের কারুকাজ করা শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। শহরে সেলের বাজারে ব্যাপক ভিড় ক্রেতাদের। লাইন দিয়েও বিছানার চাদর থেকে পোশাক সস্তা দামে কিনছেন বাসিন্দারা। খুশি ব্যবসায়ী মহলও। 

    চৈত্র মাসের শুরুতেই প্রতি বছর কাটোয়া শহরের কাছারি রোড, গোয়েঙ্কা মোড়, স্টেশন বাজার এলাকায় মানুষের ভিড়ে পা রাখার উপায় থাকছে না। শুধু তাই নয়, এসময় সেলের বাজারে ভিড় উপচে পড়ছে। কাপড়ের বাজার থেকে শুরু করে জুতো, গৃহস্থালির টুকিটাকি প্রভৃতি দোকানগুলিতে সেলের আকর্ষণীয় অফার দেওয়া হয়েছে। যে শাড়ি সারা বছর ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেই তাঁতের শাড়ি এখন সেলের বাজারে মাত্র ১৫০-৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর বিছানার সূতির চাদর মাত্র ১০০টাকায় মিলছে। তাঁতশিল্পীরা বলছেন, নববর্ষের শুরু থেকেই পুজোর জন্য নতুন ডিজাইনের শাড়ি বোনা হবে। তাই এখন ঘরে মজুত থাকা শাড়ি সস্তায় দিয়ে দিচ্ছি। তাঁতশিল্পী মজনু শেখ, নিমাই বসাক বলেন, সারা বছর অনেক অবিক্রিত শাড়ি থেকে যায়। সেগুলিই এখন অল্প দামে বিক্রি করে দিচ্ছি। অন্তত খরচটুকু তো উঠবে। আর এক তাঁতশিল্পী বলছেন, এখন ৩৫০ টাকায় জামদানি শাড়ি  বিক্রি করে দিচ্ছি। ঘরে তো আর শাড়ি মজুত থাকবে না। এর থেকে ভালো উপায় আর নেই। 

    পূর্ব বর্ধমান জেলার একটা বড় অংশের মানুষ তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। জেলায় প্রায় ৭৪হাজার তাঁতশিল্পী রয়েছেন। যারমধ্যে কাটোয়া ও কালনা মহকুমাতেই সবচেয়ে বেশি তাঁতশিল্পী আছেন। তবে জেলার তাঁতবলয় হিসেবে পরিচিত পূর্বস্থলী। কালনা মহকুমার ধাত্রীগ্রাম ও শ্রীরামপুরের তাঁতের হাটের পর কাটোয়া শহরেও সেরকম হাট তৈরি হবে। জায়গা দিচ্ছে আরএমসি মার্কেট। সেখানে ১৫হাজার স্কোয়ার ফুট জায়গায় হাটটি তৈরি করা হবে। ৩০টি স্টল করা হবে। সেখানে ১০০জন তাঁতশিল্পী বসে বিক্রি করতে পারবেন। এদিকে কাটোয়া আরএমসি মার্কেটে আগে থেকেই শান্তিপুর, সমুদ্রগড় প্রভৃতি এলাকা থেকে বহু তাঁতশিল্পী তাঁতের হাট বসান। তাঁরা রীতিমতো ভাড়া দিয়ে বেচাকেনা করেন। কিন্তু শিল্পীদের আক্ষেপ, ধাত্রীগ্রাম, শ্রীরামপুর হাটগুলিতে যেভাবে প্রচার রয়েছে কাটোয়া নিয়ে সেভাবে প্রচার নেই। শহরে তাঁতবস্ত্রের ভালো চাহিদা রয়েছে। পোশাকের ফ্যাশনের জগতে তাঁতের বস্ত্র অনেক আগেই জায়গা করে নিয়েছে।

    কাটোয়ার ঘোড়ানাশ, মুস্থলি, কেতুগ্রামের বেণীনগর, নিরোল প্রভৃতি এলাকার তাঁত বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। কেতুগ্রামের বেণীনগর এলাকায় মুর্শিদাবাদ থেকে সুতো আসে। নিরোলে সুতো রং করা হয়। এখন ভেষজ রং তাঁতের কাপড়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলার তাঁতশিল্পের মেলবন্ধন ঘটাতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। নিরোলেও যাতে আরও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে রং করা যায় তারজন্য সেখানে শিল্পীদের মেশিন দেবে সরকার। এইসব অঞ্চলের প্রায় ৪৪হাজার তাঁতশিল্পী রয়েছেন। মহকুমায় মোট ৩০টি তাঁত সমবায় ও আটটি ক্লাস্টার রয়েছে। এরমধ্যে চারটি সমবায়ের মাধ্যমে আটটি ক্লাস্টারই প্রতি বছর তন্তুজকে তাঁতের কাপড় বিক্রি করে। কাটোয়াতে তাঁতশিল্পীদের জন্য প্রায় ১১৬৬ টি ওয়ার্ক শেড তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। 
  • Link to this news (বর্তমান)