নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: শিক্ষকতার চাকরি পেয়েই সংসারের হাল ধরেছিলেন। সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরতেই আর পাঁচজন চাকরিজীবীর মতো নিজের বসতবাড়ি ঝাঁ চকচকে করে বানানোর সাধ হয়েছিল শিক্ষকদের একাংশের। তার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা লোন নিয়েছিলেন। সেই টাকায় তৈরি হয়েছে বাড়ি। এতদিন স্কুলে চাকরির বিনিময়ে পাওয়া মাস মাইনে থেকে ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ করছিলেন। প্রতি মাসে কেউ সাত হাজার, আবার কেউ ১০ হাজার কিংবা তারও বেশি টাকার কিস্তি জমা করছিলেন ঋণ পরিশোধের জন্য। তবে নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বীরভূম জেলার চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কীভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন, তা তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না।
মল্লারপুরের নুরুল ইসলাম বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। তার বছর কয়েক পরেই বাড়ি তৈরির জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ১২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ পরিশোধের জন্য তাঁকে প্রতি মাসে প্রায় ১৬ হাজার টাকা গুনতে হয়। সাঁইথিয়ার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন দাস বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনিও বাড়ি তৈরির জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। শিক্ষাকর্মী প্রভাত দান ২০ লক্ষ ঋণ নিয়েছিলেন মাসিক ১৬ হাজার টাকার কিস্তির বিনিময়ে। লক্ষ্য ছিল, পরিবারের সদস্যদের স্বপ্ন পূরণে বাড়ি তৈরি করা। সকলেই ঋণের টাকায় বাড়ি তৈরি করেছেন। সুখের সংসার গড়ে উঠেছে সেই স্বপ্নের বাড়িতে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে আসতেই তাঁদের মাথায় যেন বাজ পড়েছে। এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না কেউই।
নুরুল সাহেব বলেন, মাইনের টাকা থেকে এতদিন ঋণ পরিশোধ করছিলাম। এখন যদি চাকরি ফিরে না পাই, তাহলে ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে? বর্তমানে মাসিক কিস্তি পরিশোধ করাটাই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করতে হবে। এছাড়া আর কোনও উপায় নেই। চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, এখন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমি দিশেহারা। চাকরি ফিরে না পেলে কী করব জানি না। প্রভাতবাবুর কথায়, ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। হয়তো সাধের বসত বাড়িটাই বিক্রি করে দিতে হবে।