পাড়ার অনুষ্ঠানে স্ত্রীর নাচানাচি, মারধর করে বাড়িতে গিয়ে আত্মঘাতী স্বামী
বর্তমান | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: কালীপুজোর অনুষ্ঠানে স্ত্রী নাচানাচি করায় গালে সপাটে চড় মেরেছিলেন স্বামী। তারপর রেগে হন হন করে বাড়ি ফিরে যান। স্বামীর রুদ্ররূপ দেখে ওইদিন রাতে আর বাড়ি ফেরেননি স্ত্রী। দেওরের অনুপস্থিতিতে তাঁর বাড়িতেই জায়ের কাছে থেকে গিয়েছিলেন। সকালে স্ত্রী বাড়ি ফিরে দেখেন, গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে ঝুলছে স্বামী। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বনশ্রীগৌরী গ্রামের ঘটনা। মৃতের নাম অলোক বর(৩৮)। শনিবার সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আগের দিন রাতে নিহতের কাকা পেশায় প্রাইমারি শিক্ষক ভীমচরণ বরের বাড়িতে কালীপুজো ছিল। সেই পুজোর অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে অলোকবাবুর স্ত্রীও নাচানাচি করছিলেন। তা দেখে রাগ সামলাতে না পেরে স্ত্রীর গালে কষিয়ে চড় মারেন অলোকবাবু। এদিন তার মর্মান্তিক পরিণতি হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি মৃত অলোকবাবুর ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা তুলে খোদামবাড়ির এক যুবকের সঙ্গে চম্পট দিয়েছে। তিন মাস কেটে গেলেও এখনও তাঁর খোঁজ নেই। দুই মেয়েকে মামার বাড়িতে রেখে অলোকের ওই ভাই ভিনরাজ্যে কাজে চলে গিয়েছেন। ভাইয়ের স্ত্রী এভাবে চলে যাওয়ার পর অলোকবাবুও তাঁর স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন বলে অভিযোগ। এনিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝামেলাও হতো। তাছাড়া, আট বছর বিয়ের পর ওই দম্পতির কোনও সন্তান হয়নি। এনিয়েও দাম্পত্য বিবাদও ছিল। স্ত্রীকে সন্দেহ করায় তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো।
শুক্রবার রাতে, অলোকবাবুর কাকার বাড়িতে কালীপুজো ছিল। তাঁর কাকা ভীমবাবু প্রিয়ানগরী স্পেশাল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। কালীপুজো উপলক্ষে বাড়িতে অনেকেই নাচছিলেন। তাতে যোগ দিয়েছিলেন অলোকবাবুর স্ত্রী বন্দনাদেবীও। কিন্তু, তা মোটেও ভালো লাগছিল না অলোকবাবু। স্ত্রীর কোমর দুলিয়ে নাম দেখে রাগে তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে যায়। এরপর স্ত্রীকে কয়েকটি থাপ্পড় মারেন। তারপরই ওখান থেকে বেরিয়ে যান অলোকবাবু স্বামীর ওই রুদ্ররূপ দেখে রাতে আর বাড়ি ফিরে যাওয়ার সাহস পাননি বন্দনাদেবী। অগত্যা রাতে দেওর অসিত বরের বাড়িতে গিয়ে শুয়ে পড়েন। সকালে বাড়ি ফিরে স্বামীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান।
এবিষয়ে কাকা ভীমচরণবাবু বলেন, বিয়ের প্রায় আট বছর পরও ভাইপোর কোনও সন্তান হয়নি। এনিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হতো। অলোকের ছোট ভাইয়ের বউ অন্যজনের সঙ্গে চল যাওয়ায় স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হয়। স্বামী মারধর করতে পারে বলে ভয়ে বন্দনা রাতে আর বাড়ি যায়নি। সকালে জানতে পারি অলোক গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূলের বুথ সভাপতি কালীপদ নন্দী বলেন, স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ থেকেই ওই দম্পতির মধ্যে ঝামেলা হতো। অলোক তাঁর স্ত্রীকে মারধর করত। নন্দীগ্রাম থানার আইসি প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।