নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: স্কুলে ১০ জন শিক্ষিকা ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনজনের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। দু’জন শিক্ষাকর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যেও গ্ৰুপ-ডি কর্মীর চাকরি গিয়েছে। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুল চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে গোঘাটের কামারপুকুর নয়নতারা বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্কুলে ক্লাস নিতে শুরু করেছেন পরিচালন কমিটির সভাপতি শুভ্রপ্রকাশ লাহা। তিনি কামারপুকুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। একইসঙ্গে ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির অন্য সদস্যরাও ক্লাস নিচ্ছেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরনোর সময় স্কুলে পরীক্ষা চলছিল। ২০১৬ সালের প্যানেলে থাকা তিনজন শিক্ষিকা পরীক্ষার হলে গার্ড দিচ্ছিলেন। টিফিনের সময় তাঁরা খবর জানতে পেরে হতাশ হন। সেদিন তাঁরা পরীক্ষা পর্ব চালিয়ে দেন। কিন্তু, তারপর থেকে তাঁরা আর স্কুলে আসেননি। গত সোমবার থেকে স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষিকার অভাব বোধ হয়। সেইসময় বিষয়টি পরিচালন কমিটিকে জানানো হয়। কমিটি স্কুলের পাশে দাঁড়িয়েছে। সভাপতি সহ অন্য সদস্যরা ক্লাস নিচ্ছেন। সভাপতি ইংরেজি পড়াচ্ছেন।
পরিচালন কমিটির সভাপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্কুলে আচমকা শিক্ষিকার ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অনেকগুলি ক্লাস। বাকি শিক্ষিকাদের পক্ষে চালানো খুবই সমস্যার। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরিচালন কমিটির সদস্যরা সবাই মিলে স্কুলকে সাহায্য করব। সেইমতো সপ্তাহে যতগুলি সম্ভব ক্লাস করানো যায়, তার চেষ্টা করছি।
জানা গিয়েছে, এই বালিকা বিদ্যালয়ে প্রায় ৭০০ জন ছাত্রী রয়েছে। সেখানে শিক্ষিকাও ছিলেন ১০ জন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২০১৬ সালের প্যানেল ভুক্ত তিনজন শিক্ষিকা ও একজন গ্ৰুপ-ডি কর্মীর চাকরি যায়। তারপরই পরিচালন কমিটির সভাপতি আরেক সদস্য ‘পার্সন ইন্টারেস্টেড ইন এডুকেশন’ নিবেদিতা সেন ক্লাস নেওয়া শুরু করেছেন। নিবেদিতাদেবীও বলেন, আমাদের এলাকায় এটিই একমাত্র বালিকা বিদ্যালয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর স্কুলে একটা বিপর্যয় আসে। সেই পরিস্থিতিতে স্কুলের পঠনপাঠনের মান বজায় রাখাও আমাদের লক্ষ্য। তাই সিদ্ধান্তমতোই নবম দশম শ্রেণির ছাত্রীদের ভূগোল পড়াচ্ছি।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আরামবাগ মহকুমার বহু স্কুলেই শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
একইসঙ্গে শিক্ষাকর্মী পদেও ব্যাপক অপ্রতুলতা দেখা দেয়। অনেক স্কুলেই বিভিন্ন বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিকল্প ভাবনার পথে এগচ্ছে অনেক স্কুলই। সেরকমই কামারপুকুর নয়নতারা বালিকা বিদ্যালয়ে খোদ পরিচালন কমিটিই ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। এরফলে স্কুল কর্তৃপক্ষও কিছুটা স্বস্তিতে। পরিচালন কমিটির সভাপতি বলেন, যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততদিন এভাবেই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে স্কুলের গতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বর্তমানে শিক্ষক সঙ্কটের মুহূর্তে কলাবিভাগে স্থানীয়রা ও পরিচালন কমিটির সদস্যরা ক্লাস নিচ্ছেন। তবে বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস করানো নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ছি। অফিসের কাজ সামলে আমি নিজেও ক্লাস নিচ্ছি। যত দ্রুত এই সমস্যা মিটবে, ততই ভালো।