শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: কোনও নথি ছাড়াই বড়বাজারের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ম্যানেজার। তাঁরা এভাবে মোট ২৩টি কোম্পানিকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে ঋণের অঙ্ক ৮০ কোটিরও বেশি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ তদন্তে গরমিল ধরা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে বড়বাজার থানার পুলিস।
জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে। বড়বাজারে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় এই পর্বে প্রথম দিকে ম্যানেজার ছিলেন গুঞ্জন কুমার সিং। পরে তিনি বদলি হলে তাঁর জায়গায় আসেন সৌরভকুমার বারনেওয়াল। তাঁদের কার্যকালে বিভিন্ন কোম্পানি ঋণের জন্য আবেদন করে। কোম্পানিগুলি সবই বড়্ববাজারের ঠিকানায়। এক-একটি কোম্পানি তিন থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। কিস্তির টাকা পরিশোধ না হওয়ায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ তদন্তে নেমে দেখে, বড়সড় কেলেঙ্কারি হয়েছে। নথি জমা না পড়লেও তাদের ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, যে কাগজ জমা দিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তা সবই ভুয়ো। অথচ প্রতি বছরই ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে গিয়েছে ব্যাঙ্ক। ওই ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় ব্যাঙ্কের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এরপরই ওই ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তারা বড়বাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিস দুই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে তদন্তে নেমেছে।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই দুই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সখ্য গড়ে উঠেছিল। তাঁদের অনেকেই ঋণের জন্য আসতেন। যাতে তাঁদের ঋণ মঞ্জুর হয়, সেকারণে দুই ম্যানেজারই সংশ্লিষ্ট বিভাগের অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলেন। নথিহীন ফাইলে সই করেছিলেন গুঞ্জন ও সৌরভ। অভিযোগ, বিনিময়ে তাঁরা পেয়েছেন পাঁচ থেকে দশ শতাংশ কমিশন। যে সমস্ত কোম্পানিকে তাঁরা ঋণ দিয়েছিলেন, তার সিংহভাগই ছিল কাগুজে কোম্পানি। ঋণের টাকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার পর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ভুয়ো লেনদেন দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন মালিকরা। দুই ম্যানেজার সহ বিভিন্ন কোম্পানির মালিকদের খোঁজ চলছে।