• মোদির সাধের ‘এমপ্লয়মেন্ট’ কর্মসূচি কি আরও এক জুমলা? আবেদনের পাহাড়, টাকাই নেই কেন্দ্রের!
    বর্তমান | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: কৃষিকাজের বাইরে ছোটখাটো ব্যবসা করবে সাধারণ মানুষ। রেকর্ড বেকারত্বের ড্যামেজ কন্ট্রোলে তেমনই ঘোষণা করেছিল মোদি সরকার। রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু হয়েছিল ‘প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম’। পাঁচ বছরের কর্মসূচি। এবং প্রতিশ্রুতিও বটে। দাবি ছিল, ব্যবসার পুঁজির একটা অংশ ভর্তুকি হিসেবে দেবে কেন্দ্র। অর্থাৎ ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রক। কিন্তু তিন বছর যেতে না যেতেই সিন্দুকে তালা আটকে দিয়েছে কেন্দ্র। জানিয়েছে, আর ভর্তুকি মিলবে না। কেন? কেন্দ্রের কাছে নাকি এই খাতে আর টাকাই নেই! অথচ, এরই মধ্যে আবেদনের পাহাড় জমে গিয়েছে সরকারের কাছে। বেকারত্বের জ্বালা থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া আরও বহু যুবক-যুবতী আবেদন করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের ভাগ্যে আর শিকে ছিঁড়বে না। বিরোধীরা একে মোদি সরকারের আরও এক ‘জুমলা’ বলেই তোপ দাগছে। তাদের বক্তব্য, ‘এ আর নতুন কী? প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা না করা, বাজেট বরাদ্দ করেও টাকা না ছাড়া, এই সবই এখন মোদি সরকারের জন্য জলভাত হয়ে গিয়েছে। পুরো গেরুয়া শিবিরটাই জুমলার উপর চলছে।’

    খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি কমিশনের মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রামে’র ভর্তুকির টাকা উদ্যোগপতিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্র। বিভিন্ন শর্তের বাধা পেরতে পারলে মূলধনের একটি অংশের উপর (মার্জিন মানি) ভর্তুকি বাবদ টাকা দেয় কেন্দ্র। ভৌগোলিক অবস্থান ও অন্যান্য কয়েকটি ক্ষেত্র বিবেচনা করে উদ্যোগপতির নিজস্ব পুঁজির ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ইনসেন্টিভ দিয়ে এসেছে কেন্দ্র। উৎপাদন নির্ভর শিল্পে সর্বাধিক ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করলে এই প্রকল্পের সুযোগ মিলেছে। পরিষেবা নির্ভর ব্যবসায় মূলধনের সীমা ২০ লক্ষ টাকা।

    ২০২১-২২ অর্থবর্ষ থেকে পর পর পাঁচ বছর এই ভর্তুকির জন্য ১৩ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, প্রথম তিনটি অর্থবর্ষ পর্যন্তই এই প্রকল্পে টাকা পেয়েছেন আবেদনকারীরা। তারপর নিঃশব্দে সুযোগ প্রাপ্তির যবনিকা পতন ঘটে গিয়েছে। নতুন করে আর কোনও অর্থ বরাদ্দও করছে না কেন্দ্র। জানা গিয়েছে, এমএসএমই’র তরফে অর্থমন্ত্রকের ‘এক্সপেন্ডিচার’ বিভাগে টাকার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। পরিস্থিতি যা, প্রাপ্তিযোগের আশাও করছেন না মন্ত্রকের কর্তারা।

    কিন্তু প্রশ্ন হল, যে লক্ষাধিক আবেদন এখনও বিভিন্ন ব্যাঙ্কে পড়ে আছে, তার কী হবে? নতুন করে আবেদন নেওয়া হবে না—এই ঘোষণা করে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তেই পারে কেন্দ্র। কিন্তু যাঁদের আবেদন গৃহীত হয়ে পড়ে আছে? কেন্দ্র দাবি করছে, এই প্রকল্পে নাকি বাংলাতেই ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, তার প্রভাব বেকারত্বের পরিসংখ্যানে পড়ছে না কেন? আর কেনই বা নরেন্দ্র মোদির সাধের এই প্রকল্প গুটিয়ে ফেলতে হল? এই প্রকল্প নিয়ে প্রচারের ঢাক তো কম পেটায়নি গেরুয়া শিবির! তাহলে আজ টাকা ‘ফুরিয়ে যাওয়া’র সত্যিটা লগ্নিকারী বা ব্যবসায় নামতে চাওয়া যুবক-যুবতীদের থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে কেন তারা? মন্ত্রকের আধিকারিকদের কাছেও কোনও প্রশ্নেরই উত্তর নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)