• মুর্শিদাবাদ সামলাতে টিম ‘স্পেশাল ২৩’, রুটমার্চ পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনীর
    এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, কলকাতা ও মুর্শিদাবাদ: অশান্ত পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নতুন ওয়াকফ আইনকে ঘিরে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, সুতি, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ানের মতো বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি যাতে নতুন করে উত্তপ্ত না-হয়ে ওঠে, তার জন্য আলাদা করে পরিকল্পনা করছে রাজ্য পুলিশ।

    রবিবার পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পদে কর্মরত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষ ২৩ জন অফিসারকে মুর্শিদাবাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এঁদের মধ্যে কয়েকটি জেলার এসপি যেমন রয়েছেন, তেমনই সিআইডি, রেল পুলিশ, আইবি-র মতো রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করা অফিসারও আছেন। মুর্শিদাবাদের উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আপাতত তাঁদের ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ হিসেবে পাঠানো হচ্ছে।

    শনিবার সন্ধেতেই মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। রবিবারও দিনভর তিনি মুর্শিদাবাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ পুলিশকর্তাদের পাশাপাশি বিএসএফ আধিকারিক এবং সামশেরগঞ্জ-সহ বিভিন্ন থানার অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি যে সব এলাকায় গত ক’দিনে অশান্তি হয়েছে, সেই এলাকার অবস্থাও এ দিন খতিয়ে দেখেন ডিজিপি।

    পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজীব বলেন, ‘মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।’ সেই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘গুজবে কান দেবেন না। আপনারা সতর্ক থাকুন। কোনও খবর পেলেই পুলিশকে জা‍নান।’ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, ধুলিয়ান, সুতি এবং সামশেরগঞ্জে মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এ দিন বিএসএফের এক কর্তাও বলেছেন, ‘রাজ্য পুলিশ যতদিন চাইবে, বিএসএফ জওয়ানরাও মোতায়েন থাকবেন।’

    মুর্শিদাবাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে এ দিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাজভবনের তরফ থেকে। সূত্রের খবর, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বিস্তারিত তথ্য–সহ চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রকে। মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে রবিবার রাত পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফে।

    তাঁদের মধ্যে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। বাকি দু’জন, বাবা–ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই মামলায় এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে ধুলিয়ানে আরও একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এ নিয়ে মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক অশান্তিতে মোট পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর মিলল।

    পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার গভীর রাতে ধুলিয়ানে গুলিবিদ্ধ ওই যুবককে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। ছাব্বিশ বছরের ওই যুবকের পিঠে গুলি লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধুলিয়ান পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ির ছাদে ছিলেন ওই যুবক। অভিযোগ, সেই সময়ে নতুন করে কোনও গোলমালের জেরে বিএসএফ জওয়ানদের ছোড়া গুলি তাঁর শরীরে লাগে। বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন তিনি। এর আগে ধুলিয়ানেই গুলিবিদ্ধ অন্য এক যুবককে চিকিৎসার জন্য রবিবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

    এ দিন জঙ্গিপুরের সামশেরগঞ্জ থানা এলাকায় নতুন করে কোনও অশান্তির ঘটনা না-ঘটলেও থমথমে রয়েছে পরিস্থিতি। শনিবার রাতে ধুলিয়ানে শান্তি ফেরাতে রাজ্য পুলিশের ডিজি (এসসিআরবি) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে বৈঠক করেন। নতুন করে গোলমাল এড়াতে ‘শান্তি কমিটি’ তৈরির কথাও বলা হয়েছে এলাকায়। রাতেই সামশেরগঞ্জ থেকে জঙ্গিপুরে চলে আসেন ডিজিপি রাজীব কুমার।

    তাঁর নেতৃত্বে ওই এলাকায় রুট মার্চ করে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। ফরাক্কার গঙ্গাভবন অতিথি আবাসে রাত কাটিয়ে রবিবার সকালে ফের সামশেরগঞ্জ থানায় যান তিনি। থানায় পুলিশ অফিসারদের কী কী দায়িত্ব পালন করতে হবে, সেই রূপরেখাও তৈরি করে দেন তিনি।

    পুলিশ সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদে গত কয়েক দিনে এই সব অশান্তির ঘটনায় রবিবার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তারির সংখ্যা বেড়ে ১৮০ হয়েছে। এ দিন দুপুরে ধুলিয়ানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন গিয়ে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার স্থানীয়দের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তিনি বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, পুলিশ সব রকমের সহযোগিতা করতে তৈরি। এ দিনই মুর্শিদাবাদে পৌঁছন বিএসএফ–এর (দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার) আইজি করণি সিংহ শেখাওয়াত।

    তিনি বলেন, ‘ওই সব এলাকায় যত দিন পুলিশ চাইবে, তত দিন বিএসএফ মোতায়েন থাকবে।’ রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিস্থিতি কী ভাবে সামলানো হবে, সে বিষয়ে রাজীবের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার রাত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছেড়ে অনেকেই অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। প্রশাসনের তরফে তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায়ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ গুজবে কান দেবেন না। অনেক রকম গুজব ভাসছে। কারও কোনও বিষয়ে সংশয় থাকলে, আমরা তাঁর সন্দেহ দূর করতে তৈরি।’

  • Link to this news (এই সময়)