এই সময়: গত কয়েক বছরে তাঁদেরই আন্দোলন ঘিরে মূলত একাধিক বার উত্তাল হয়েছে বঙ্গ–রাজনীতি। ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনই ঘুরপাক খেতো খবরের শিরোনাম। কিন্তু গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম–রায়ে এক লপ্তে এসএসসি–র প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার পরে এখন আন্দোলনের বৃত্ত মূলত ঘুরপাক খাচ্ছে তথাকথিত ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের নিয়ে।
এই অবস্থায় ফের আন্দোলনের রাস্তাতেই নামলেন সেই ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীরা। যাঁদের লাগাতার আন্দোলন, লড়াই, আদালতে একের পর এক মামলার জেরেই রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির পর্দাফাঁস হয়। মাঝে নানা কারণে মাস তিনেকের বিরতি ছিল। কিন্তু রবিবার ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের পাশাপাশি কলকাতার রাস্তায় ধর্না ফের শুরু করলেন ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীরাও।
যদিও দু’পক্ষই বলছেন, তাঁদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। বরং দু পক্ষই চান, ২০১৬ সালের এসএসসির চাকরির প্যানেল বাঁচুক। চাকরি থাকুক ‘যোগ্য’দের। ‘টেন্টেড’ বা ‘অযোগ্য’দের জায়গায় চাকরি পাক এসএসসি–র ওয়েটিং লিস্টে থাকা ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীরা।
২০১৬ সালের এসএসসির ওয়েটিং লিস্টে থাকা ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন সব মিলিয়ে মোট ১৩১০ দিনে পড়ল। এর মধ্যে অবশ্য মাঝে মাস কয়েকের বিরতি ছিল। রবিবার থেকে ফের ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তাঁরা বসতে শুরু করলেন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ থাকায় ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা প্রথমে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসলেও পরে তাঁরা ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের সেই জায়গা ছেড়ে দিয়ে ওয়াই চ্যানেলে ধর্নার স্থান পরিবর্তন করেন।
‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের সংগঠন ‘বঙ্গীয় ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা মঞ্চে’র দাবি, অবিলম্বে ‘অযোগ্য’দের নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত করে তাঁদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে। মঞ্চের তরফে অভিষেক সেন বলেন, ‘আমরা কখনওই চাইনি যে, পুরো প্যানেল বাতিল করা হোক। আমরা চেয়েছিলাম, প্যানেলে অযোগ্যদের চিহ্নিত করে তাদের চাকরি বাতিল করতে হবে। কিন্তু মহামান্য আদালত সেই আবেদন গ্রাহ্য করেননি।’
এখন তো পুরো প্যানেলই বাতিল, তা হলে ফের রাস্তায় ধর্নায় বসে কী লাভ? অভিষেকের কথায়, ‘আমরা চাইছি, সরকার বঞ্চিত যোগ্য চাকরিহারাদের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশনে আমাদের, অর্থাৎ ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করুক। কারণ, প্রকৃত বঞ্চিত তো আমরাই। আমাদের সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেবল দুর্নীতির কারণে আমরা চাকরি পাইনি।’
এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি এই চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আগে তাঁদের কথা হয়েছে। অভিষেকের বক্তব্য, ‘এতগুলো দিন আমরা অপেক্ষা করেছি। মাঝে কিছু মাস আমরা ধর্নাও দিইনি। কারণ, আমরা আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। শুনানির গতিবিধি দেখছিলাম। সরকার আমাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাও দেখছিলাম। কিন্তু কোনও পক্ষই যখন কিছু করলেন না, তখন রাস্তা ছাড়া আমাদের আর গতি কী!’
তাঁরা জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টেও তাঁদের আইনজীবীরা বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, প্যানেল বাঁচিয়ে ‘অযোগ্য’দের সরিয়ে এই ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হোক। তাঁদের দাবি, এমন চাকরিপ্রার্থী সব মিলিয়ে রয়েছেন প্রায় চার হাজার জন।
‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের এই আন্দোলন প্রসঙ্গে ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের তরফে চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘এই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যেও দু’টি ভাগ রয়েছে। যাঁরা ওয়েটিং লিস্টের নীচের দিকে আছেন, তাঁরা চাইছিলেন যেন প্যানেলটাই বাতিল হয়। কিন্তু আজ যাঁরা রাস্তায় নেমেছেন, তাঁরা চাননি প্যানেল বাতিল হোক। বরং টেন্টেডদের চিহ্নিত করে ওই বঞ্চিতরাও চাকরি পান, আমরা সেটাও চাই।’ তবে আইনজ্ঞদের একাংশ সুপ্রিম–রায় বিশ্লেষণ করে বলছেন, ‘শীর্ষ আদালত তো গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপেই দুর্নীতির দিকে ইঙ্গিত করে প্যানেল খারিজ করেছে। অর্থাৎ, সে ক্ষেত্রে ওয়েটিং লিস্টেও ‘যোগ্য’ বলে আর নতুন কোনও বিষয় বিবেচনা করার সুযোগ নেই।
এ দিকে, সল্টলেকে এসএসসি–র সদর দপ্তরের কাছে গত চারদিন ধরে তথাকথিত ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের কয়েকজন অনশন আন্দোলনে বসেছিলেন। রবিবার তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করে নেন। কারণ হিসেবে তাঁরা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ‘পুলিশি হেনস্থা’ ও ‘প্রশাসনিক অসহযোগিতা’র দিকে। ওই তল্লাটে মশার কামড়, পরিষেবাগত সমস্যার কথাও উল্লেখ করেছেন।