এই সময়, হাসনাবাদ: কিছু দিন যাবৎ বিস্তর চর্চায় ব্রিটিশ ওয়েব সিরিজ় ‘অ্যাডোলেসেন্স’। যেখানে জেমি মিলার নামে ১৩ বছরের এক কিশোর তার স্কুলেরই এক ছাত্রীকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত। জেমির পারিবারিক প্রেক্ষাপট, মহিলাদের প্রতি তার মানসিকতা, সামাজিক মাধ্যমে তার হেনস্থা হওয়া, স্কুলের কিছু ঘটনাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে ওই সাইকোলজিক্যাল ক্রাইম ড্রামা সিরিজ়ের কাহিনি। জেমির সবটা জেনে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন ফরেন্সিক সাইকোলজিস্ট।
আর শনিবার গভীর রাতে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ থানার অফিসাররা হকচকিয়ে গেলেন ওই এলাকার রামেশ্বরপুরের এক কিশোরের স্বীকারোক্তি পেয়ে। জেমির চেয়ে সে এক বছরের বড়। নিজের ছ’বছরের মামাতো বোনকে গলা টিপে খুন করে পুকুরের ধারে মাটি খুঁড়ে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগে ১৪ বছরের ওই কিশোরকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরের বক্তব্য অনুযায়ী, মামাতো বোন পুকুরের জলে তার জুতো ফেলে দেয় বলে সেই রাগে তাকে ছেলেটি খুন করেছে। রবিবার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করানো হলে সেখান থেকে অভিযুক্ত ওই কিশোরকে হোমে পাঠানো হয়।
বিস্মিত পুলিশ অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, ‘সন্ধে সাড়ে ৬টা থেকে রাত দেড়টা, টানা সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তবেই ওই ছেলেটি ভেঙে পড়ে সব কিছু স্বীকার করেছে। তার আগে ওর আত্মীয়স্বজন শনিবার সকাল থেকে ওকে নাগাতার ওর বোনের কথা জিজ্ঞেস করে গিয়েছেন। শনিবার সকালে বাচ্চাটাকে ওর পিসতুতো দাদার সঙ্গেই শেষবার দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ও একবারও মুখ খোলেনি। আমরা ওর মানসিকতা দেখে অবাক।’ স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুলে নেশা করা এবং অন্য ছাত্রদের নেশা করতে মদত দেওয়ার অভিযোগে কিছু দিন আগে ওই কিশোরকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
শনিবার গভীর রাতে ওই কিশোরের স্বীকারোক্তির পর শিশুটির বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পুকুরের ধারে মাটি খুঁড়ে তার দেহ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে ওই পুকুরের জলেই শিশুটির জুতো ভাসতে দেখা গিয়েছিল। তদন্তকারীদের বক্তব্য, শুধুই জুতো ফেলে দেওয়ার ঘটনা নাকি অন্য কোনও কারণে ক্লাস ওয়ানের ওই ছাত্রীকে খুন করা হলো, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের বক্তব্য, শিশুটিকে মারধরও করা হয়েছিল কি না, ময়না–তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে সেটা পরিষ্কার হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ ছ’বছরের মেয়েটিকে তার ওই পিসতুতো দাদার সঙ্গে দেখা যায়। তার পর, সকাল ৯টা থেকে শিশুটির বাড়ির লোকজন তাকে আর খুঁজে পাননি। দুপুরে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পুকুরে জলে শিশুটির জুতো ভাসতে দেখে তার বাড়ির বড়রা দফায় দফায় ওই পুকুরে নামলেও তার খোঁজ পাননি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, তবে পুলিশ–কুকুরকে ওই পুকুরের কাছে নিয়ে যাওয়া হলেও কোনও লাভ হয়নি। মেয়েটির পিসতুতো দাদা ওই কিশোরকে বার বার জিজ্ঞেস করা হয়, তখন সে কিছুই বলেনি। নিখোঁজ শিশুটির বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আরও বিস্তারিত ভাবে কথা বলার পর পুলিশ সন্ধ্যায় ওই কিশোরকে হাসনাবাদ থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের বক্তব্য, শেষমেশ গভীর রাতে ওই কিশোর সবটা স্বীকার করে। অভিযুক্ত কিশোরকে এ দিন সকালে ওই পুকুরের ধারে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হয়েছে।
বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, ‘পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমে শিশুটির দেহ উদ্ধার করেছে। ওই ঘটনায় জড়িত এক কিশোরকে আটক করা হয়েছে।’