চাকরি বাতিলের ঘটনায় নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। সেই কর্মসূচি রবিবার শেষ পর্যন্ত আবর্তিত হল ধর্মীয় পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় মুর্শিদাবাদে যে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে, তার প্রেক্ষিতেই এ বার সরাসরি ‘ভাত নয়, জাতের লড়াই’য়ের বার্তা দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। একই সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে শোনা গেল ‘হিন্দু শহিদ’ ঘোষণার কথা। পক্ষান্তরে, বিজেপিকে আলাদা ভাবে নিশানা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম।
নিয়োগ-দুর্নীতির প্রতিবাদে কলেজ স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত দলের ডাকা মিছিলে এ দিন রাজ্য বিজেপির ‘ঐক্যে’র ছবিও দেখা গিয়েছে। সেখানে ছিলেন শুভেন্দু, সুকান্ত এবং দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এই কর্মসূচি থেকেই মুর্শিদাবাদের ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেছেন, “নিহতদের দু’জন সিপিএম সমর্থক ছিলেন। সিপিএম নেতারা বুঝতে পারছেন লড়াইটা ভাত নয়, জাতের? আগামী দিন ধর্মের লড়াই হবে।” প্রসঙ্গত, বিভাজনের রাজনীতির যে অভিযোগ, তার পাল্টা হিসেবে বরাবরই ভাতের লড়াইয়ে জোর দেওয়ার কথা বলে এসেছে সিপিএম। সেই বক্তব্যকেই সুকান্ত এ দিন ওই মন্তব্যের মাধ্যমে আক্রমণ করেছেন। এর সঙ্গেই সুকান্ত জানিয়েছেন, যোগ্য শিক্ষকদের জন্য দল অবশ্যই লড়বে। কিন্তু আগে ধর্মকে বাঁচাতে হবে।
যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্নকে আমরা সব সময় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে এসেছি। সেই সব প্রশ্নকে পিছনে ঠেলে বিভাজনের পরিবেশ তৈরি করেছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস। এ বার তো বিজেপি বুঝিয়েই দিল, তারা কী চায়! মানুষকে এখন বুঝে নিতে হবে।’’
নিহত বাবা-ছেলেকে দল যাতে ‘হিন্দু শহিদ’ হিসেবে ঘোষণা করে, সেই দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি ক্ষমতায় এসে তাঁদের সরকারি ভাবে শহিদ সম্মান দিয়ে স্মারক স্তম্ভ তৈরি করবে। মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেছিলেন, যদি ওঁরা (সংখ্যালঘুরা) আন্দোলন করেন, সামলাতে পারবেন তো? এখন যা হচ্ছে, তা এই বক্তব্যেরই পরিণতি।” বিরোধী দলনেতার কথার রেশ ধরেই সুকান্ত জানিয়েছেন, আগামী ১৬ এপ্রিল দিনটিকে দলীয় ভাবে ‘হিন্দু শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে বিধানসভা ভোটের দাবিও তুলেছেন শুভেন্দু।
তৃণমূল ও বিজেপিকে এক পঙ্ক্তিতে বসিয়ে নিশানা করেছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “জাতের লড়াই আটকাতে গিয়েই ওঁরা (চন্দন, হরগোবিন্দ) শহিদ হয়েছেন। ভাত ও কর্মসংস্থানের লড়াইকে পিছনের সারিতে ঠেলে দিতে দক্ষিণপন্থী দলগুলি জাত-বর্ণ-ধর্মের লড়াই চালিয়ে যেতে চায়। বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক উস্কানি, তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতার পরিণতি ওই দুই মৃত্যু।” বিজেপি-কে নিশানা করেছে তৃণমূলও। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “লড়াইটা ‘রোটি, কাপড়া আর মকানের’ই। বিজেপি এই তিনটি জিনিস দিতে পারছে না বলে জাতের দিকে নজর ঘোরাতে চাইছে। খুব শক্তিশালী একটা মহলকে ব্যবহার করে চক্রান্তের পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
পাশাপাশি, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের উপরে পুলিশের মারধরের প্রতিবাদে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকে রাজ্য জুড়ে ‘থানা ঘেরাও’ হয়েছে। কলকাতার মুচিপাড়া, বৌবাজার, হেয়ার স্ট্রিট, নিউমার্কেট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, ভবানীপুর, ইকবালপুর, তিলজলা, তপসিয়া, নিউ আলিপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। দেওয়া হয়েছে দাবিপত্রও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, “তৃণমূলের নেতৃত্বে সরকারের পুলিশ মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কসবার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশকর্মীকে ‘ক্লোজ়’ করতে হবে।”