• এ বার কী হবে, ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় সব স্কুল
    এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম

    শীর্ষ আদালতের রায়ের পর জঙ্গলমহলের বেশির ভাগ স্কুলের পড়াশোনা কার্যত বিপর্যস্ত। গ্রামাঞ্চলে হাই স্কুলগুলির বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের শিক্ষক প্রায় শূন্যে এসে ঠেকেছে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত শিক্ষা মহল। কলকাতার ইনডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ্য শিক্ষকদের বৈঠকের পরে অনেকটা আশার আলো দেখেছিল স্কুলগুলি। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে হয়তো স্কুলমুখী হতে পারেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলার প্রায় কোনও স্কুলেই চাকরিহারা শিক্ষকদের দেখা যায়নি। তাঁদের একটাই কথা, 'চোখের জল নিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়েছি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সম্মানের সঙ্গে স্কুলে ফিরব।'

    এই অবস্থায় যোগ্য শিক্ষকদের সংগঠন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের নেতৃত্ব রবিবার সাফ জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছাড়া তাঁরা কোনও ভাবেই স্কুলে ফিরবেন না। তাঁদের এ দিনের এই ঘোষণার পরেই স্কুল কী ভাবে চলবে এই চিন্তাই এখন গ্রাস করেছে প্রধান শিক্ষকদের। ঝাড়গ্রাম ব্লকের বিরিহান্ডি বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিন শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। একাদশ-দ্বাদশের ইতিহাস ও শিক্ষা বিজ্ঞানের একমাত্র শিক্ষকদের চাকরি গিয়েছে।

    ফলে একাদশ-দ্বাদশের ইতিহাস ও শিক্ষা বিজ্ঞানের পঠন-পাঠন কী ভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয়কুমার মণ্ডল বলেন, 'স্কুলের শিক্ষক সংখ্যা খুবই কম ছিল। তার মধ্যে আরও তিনজনের চাকরি বাতিল হয়েছে। খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছি। স্কুলে শিক্ষক না এলে বা বিকল্প শিক্ষকের বন্দোবস্ত না হলে একাদশ ও দ্বাদশের পঠন-পাঠন চালানো অসম্ভব।'

    বিরিহান্ডির মতো একই ছবি বল্লা বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল ও বেলপাহাড়ি বামুনডিহা হাইস্কুলের। বল্লা বিদ্যাপীঠের একাদশ-দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের রসায়ন ও পদার্থবিদ্যার দু'জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। বামুনডিহা হাইস্কুলের রসায়ন বিজ্ঞানের একমাত্র শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে।

    ফলে এই দু'টি স্কুলে এই বিষয়গুলির কোনও বিকল্প শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পঠন-পাঠন নিয়ে চিন্তিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকের সমস্যা না মিটলে বল্লা বিদ্যাপীঠে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগের একাদশের ভর্তি পর্যন্ত বাতিলের কথা ভেবে রেখেছে। হারডদা রামকৃষ্ণ হাইস্কুলের নবম-দশমের বাংলা বিষয়ের চাকরিহারা শিক্ষক জয়দেব নন্দী বলেন, 'চোখের জল নিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়েছিলাম। সেখানে কী ভাবে মাথা নত করে স্কুলে যেতে পারি? নিজের মেধার জোরেই চাকরি পেয়েছি। নিজের পরিশ্রমের কারণেই বেতন পাই। সুপ্রিম কোর্ট যতদিন না পর্যন্ত আমাদের সম্মানের সঙ্গে স্কুলে ফেরার নির্দেশ দিচ্ছে ততদিন আমরা স্কুলে ফিরব না। সুপ্রিম কোর্টের ঊর্ধ্বে তো আমরা নই।’

  • Link to this news (এই সময়)