• ক্লাসে না ফেরার সিদ্ধান্তে সহমত অধিকাংশ শিক্ষক
    এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না ও সমীর মণ্ডল ■ পাঁশকুড়া ও মেদিনীপুর

    শ্যাম রাখি, না কুল রাখি! সুপ্রিম-রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল চাকরিহারাদের মধ্যে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে শাসক দলের নেতা, মন্ত্রী প্রত্যেকেই চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের স্কুলে ফিরতে বলছিলেন। রবিবার কলকাতায় আন্দোলনরত চাকরিহারা শিক্ষকেরা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, যতদিন না আইনি পথে সমাধান সূত্র মিলছে তত দিন তাঁরা স্কুলে ফিরবেন না। সারা রাজ্যের মতো এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই মেদিনীপুরের অধিকাংশ চাকরিহারা শিক্ষক। ফলে আপাতত সরকারি স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন স্বাভাবিক হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। দুশ্চিন্তা বাডল স্কুলে স্কুলে।

    গত ৭এপ্রিল চাকরিহারা শিক্ষকদের নিয়ে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন তিনি যোগ্য শিক্ষকদের স্কুলে ফিরে যেতে বলেন। এমনকি শিক্ষকদের স্বেছাশ্রম দেওয়ার কোথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে। তার পরেও অধিকাংশ শিক্ষক স্কুলমুখো হননি। রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এ ব্যাপারে তাঁদের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। জানানো হয়, আদালতের অনুমতি ছাড়া তাঁরা কেউ স্কুলে ফিরবেন না। এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন অধিকাংশ চাকরিহারা শিক্ষক।

    পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের কাঞ্চনপুরের বাসিন্দা বিপ্লব বিহার বলেন, 'আমরা এখন স্কুলে গেলে সেটা হবে আদালত অবমাননার সামিল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্কুলে গিয়ে কোনও আইনি জটিলতায় পড়লে তখন কী হবে? সরকার অথবা শিক্ষা দপ্তর লিখিত নির্দেশ দিলে স্কুলে যাব। যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তাকে স্বাগত জানাই।' হলদিয়ার চকদ্বীপা হাইস্কুলের চাকরিহারা শিক্ষক কার্তিক আদক বলেন, 'একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। কোনও ব্যক্তির কথায় স্কুলে যাব না। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আইন মানেন না। উনি গায়ের জোরে সব কিছু করতে চান। ওঁর সরকার এবং শিক্ষা দপ্তরের অপদার্থতার জন্য আজ আমরা পথে বসেছি।'

    আদালতের রায়ে চাকরি চলে গিয়েছে। আদালতের রায়েই চাকরি পুনর্বহাল হতে পারে। এ ছাড়া বিকল্প কো নও রাস্তা নেই। এমনটাই মনে করেন পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের মৌমিতা অধিকারী। তিনি বলেন, 'স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। রাজ্য সরকার তথা শিক্ষা দপ্তর আমাদের যোগ্য প্রমাণ করার জন্য যা যা করা দরকার আগে তা করুক। সরকার আদালতে সঠিক তথ্য জমা দিলে আমরা চাকরি ফিরে পাব।'

    চাকরিহারাদের এ দিনের এই সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তা বাড়ছে প্রধান শিক্ষকদের। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ব্যানার্জীডাঙা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, 'আমাদের স্কুলের ছ'জন শিক্ষক ছিলেন ২০১৬ সালের প্যানেলের। দু'জন শিক্ষাকর্মী। তাঁরা সবাই চাকরিহারা হয়েছেন। এখন স্কুলে অঙ্কের একজন শিক্ষকও নেই। কে ক্লাস নেবেন, পরীক্ষার খাতা কাদের দিয়ে দেখাব কিছুই বুঝতে পারছি না। ওই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে না এলে খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে।'

    ওই জেলারই পিংবনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী আলোচনা করছেন। এসএসসি তালিকা প্রকাশ করবে বলছে। আমরা আশার আলো দেখছিলাম। শিক্ষকদের এমন ঘোষণার পর আমরা হতাশ। কী যে সমস্যায় পড়েরেছি তা বলে বোঝাতে পারব না। শিক্ষা দপ্তর কী অর্ডার দেয় সেদিকে তাকিয়ে রয়েছি। প্রয়োজনে অস্থায়ী শিক্ষক নিতে হবে!'

    পশ্চিম মেদিনীপুরের চাকরিহারা শিক্ষিকা আতেকা বানু বলেন, 'কারও পাপের ফল আমাদের কেন ভোগ করতে হবে? আমরা চাই, যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশ করে যোগ্যদের চাকরিতে ফেরানো হোক।' খড়াপুর এক স্কুলের চাকরিহারা অনিন্দিতা গিরি বলেন, 'সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে নিক। আমরা স্কুলে আপাতত যাচ্ছি না। প্রয়োজনে পরীক্ষা নিতে হলে পরীক্ষা দেবো। আবার যোগ্যাতা দিয়েই সফল হব।'

  • Link to this news (এই সময়)