• ‘উৎকর্ষে’র জন্য কান্নাকাটি পড়ুয়াদের, দুশ্চিন্তায় স্কুুল
    এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, মেদিনীপুর: স্কুলে আসছেন না উৎকর্ষ স্যর। মন খারাপ ছাত্রছাত্রীদের। প্রতিদিন প্রধান শিক্ষক বা স্কুলের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে কোনও না কোনও পড়ুয়া জিজ্ঞেস করছে, ‘জীবন বিজ্ঞান স্যর কি আর স্কুলে আসবেন না? কয়েকজন পড়ুয়া স্কুলে কান্নাকাটিও করেছেন তাদের প্রিয় শিক্ষকের জন্য। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় থানার পিংবনী হাইস্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক উৎকর্ষ নায়ক চাকরি হারিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে।

    ছাত্রছাত্রীরা, বিশেষ করে জীববিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা খুব ভেঙে পডে়ছে তাঁর জন্য। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘স্কুলের ছ’জন শিক্ষক ও তিনজন শিক্ষাকর্মী চাকরিহারা হয়েছেন। প্রত্যেকেই খুব জনপ্রিয়। উৎকর্ষ নায়কই স্কুলের জীবন বিজ্ঞানের একমাত্র শিক্ষক ছিলেন। আইআইটি-তে গবেষণা করতে করতে ছেড়ে দিয়ে শিক্ষকতার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে আমার স্কুলের ছ’জন শিক্ষকেরই যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও অধিকার আমার নেই। জীবন বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা অভিভাবকহারা হয়ে পড়েছে।

    পাশাপাশি, বর্তমানে স্কুলে একজনও শিক্ষাকর্মী নেই। শিক্ষকদেরই স্কুলের যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে। কী ভাবে এই ঘাটতি মেটাব ভেবে পাচ্ছি না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা জীবন বিজ্ঞান নিয়ে। পাশাপাশি রসায়ন, পুষ্টিবিদ্যা, সংস্কৃতেও একই অবস্থা।’

    স্কুলে দশম শ্রেণির পড়ুয়া অঙ্কিতা দাঁ, একাদশ শ্রেণির পাপিয়া দত্ত, দ্বাদশ শ্রেণির সৌরভ মণ্ডলদের কথা, ‘আমরা অথৈ জলে পড়ে গেলাম। স্কুলের স্যরেদের উপর নির্ভর করেই পড়াশোনা করি। বিশেষ করে উৎকর্ষ স্যরের জন্য খুব মন খারাপ। উনি এত ভালো পড়ান, আমাদের চিন্তা করতে হয় না। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে যেতেন। আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না যে উনি আর স্কুলে আসবেন না!’

    জীববিজ্ঞানে স্নাতক উৎকর্ষ ২০১৪ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করেন। ২০১৫ সালে বিএড। সবেতেই ফার্স্ট ক্লাস। ২০১৫ সালে ‘গেট’ উত্তীর্ণ হন, ২০১৬ সালে সিএসআইআর নেট দু’বার উত্তীর্ণ হন। ২০১৬ সালে আইআইটি–তে গবেষণার সুযোগ পেয়ে শুরুও করেন। বাড়ির ইচ্ছে ছিল গবেষণার কাজে বিদেশে যাক ছেলে। কিন্তু সুযোগ পেয়ে বাড়ির অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিক্ষকতার পেশায় যোগ দেন পিংবনী স্কুলে।

    এখন তাঁর প্রশ্ন, শিক্ষকতার কাজে যোগ দেওয়াই কি কাল হলো! তাঁর কথায়, ‘কিছু বলার নেই। এই ঘটনার পর কোনও কিছু ভালো লাগছে না। লেখাপড়া শিখে প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই সফল হয়ে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছি। এটাই কি আমার অপরাধ? সত্যি কি আমাদের মতো যোগ্যদেরও চাকরি হারাতে হবে? সব যেন কেমন উলটোপালটা হয়ে গেল।’

  • Link to this news (এই সময়)