এই সময়, পুরুলিয়া: অনেকদিনই ফাটল ধরেছে মন্দিরগাত্রে। খিলানের দরজার উপরেও ছোট বড় ফাটলের সংখ্যা বাড়ছে। নোনা ধরেছে দেওয়ালে। ইতিউতি আগাছাও মাথা তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে পুরুলিয়ার বেগুনকোদর রাসমঞ্চ। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে ওঠা অনুপম শিল্পশৈলির এই রাসমঞ্চটির সংস্কার শুরু করছে রাজ্য সরকার। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
ঝালদা-২ ব্লকের বেগুনকোদর রাজ পরিবার নির্মিত এই রাসমঞ্চটিকে ইতিমধ্যে স্বীকৃত সৌধ হিসেবে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছেন, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী। জেলার প্রত্নগবেষক সুভাষ রায় জানাচ্ছেন, ১৭০০ সালে বেগুনকোদরে এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়। রাজা রতন সিংহ বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা েনন। তার প্রভাবে এই এলাকায় বৈষ্ণব প্রভাবিত একাধিক মন্দির বা দেবালয় গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে এই ধারা অব্যাহত থেকেছে।
রাজা দিগম্বর সিংহের সময়ে (১৮০৩–১৮৫০) এই রাসমঞ্চটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। এর নির্মাণকাজ শেষ হয় রাজা জগন্নাথ সিংয়ের সময়ে (২৮৫০–১৮৮৭)। সুভাষ বলেন, ‘রাসমঞ্চে মূল মন্দিরের প্রথম সারিতে রয়েছে ১৬টি খিলানের প্রবেশপথ। দ্বিতীয় সারিতে রয়েছে ১২টি খিলানের প্রবেশদ্বার। তৃতীয় ও চতুর্থ সারিতেও চারটি করে একই রকম খিলানের দরজা রয়েছে।’
জেলার আর এক প্রত্নগবেষক দিলীপ গোস্বামী জানাচ্ছেন, খিলানগুলি অলঙ্কৃত। তৃতীয় ও চতুর্থ সারির প্রবেশপথ পেরিয়ে দেবতার অধিষ্ঠানের মঞ্চ। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজও এখানে রাস উতসব পালিত হয়। বেগুনকোদর রাস উৎসব কমিটির উদ্যোক্তাদের অন্যতম অরূপ গোস্বামী বলেন, ‘স্থানীয় মানুষজন নিজেদের উদ্যোগে ২০০৪ সালে একবার সংস্কার করিয়েছিলেন। তার পর থেকে অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই মঞ্চ। অনুপম শিল্পশৈলির এই স্থাপত্য যাতে ধ্বংস না হয়ে যায় তার জন্য এই এলাকার মানুষ রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।’
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই প্রত্নস্থল সংস্কারের কথা জানানো হয়। দপ্তরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘গত অক্টোবরে প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহালয় অধিকারের অধিকারিকেরা জেলায় এসে সরেজমিনে এই রাসমঞ্চটি দেখার পরেই সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সৌধটি সংস্কারের জন্য এক কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই ধরনের প্রত্নস্থল সংস্কারের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন সংস্থার হাতে এই কাজের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে।’ সংস্কারের কাজটি দেখভালের দায়িত্ব বর্তেছে পূর্ত দপ্তরের উপরে। জেলা পূর্ত দপ্তরের (সিভিল) নির্বাহী বাস্তুকার কৃষ্ণেন্দু দাশগুপ্ত বলেন, ‘দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কাজ শেষ হয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ হবে।’ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তপন বিদ বলেন, ‘শুধু এই এলাকার মানুষজনেরাই নন, জেলার মানুষও রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।’